সূরা কাহাফ এর ফজিলত এবং এটি কখন পড়তে হয় জেনে নিন

সূরা কাহাফ এর ফজিলত

সূরা কাহাফ পবিত্ত্র কোরআন মাজিদের ১৮তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১১০টি। এই সূরা ৪টি অংশে বিভক্ত। সূরা কাহাফ এর ফজিলত এবং এটি সম্পর্কে অনেক তাফসিরবিদ্গণ এটিকে বিশ্লেষণ করেছেন। কাহাফ অর্থ হলো গুহা। প্রাচীনকালের একটি অলৌকিক ঘঠনা কে কেন্দ্র করে এই সূরা গঠিত হয়েছে। আজকের কন্টেন্টে আমরা সূরা কাহাফ এর ফজিলত, এর ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস, এটি কখন কিভাবে পড়তে হয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো। তাই পুরো কন্টেন্টি পড়ার অনুরোধ রইলো। 

সূরা কাহাফ এর ফজিলত

সূরা কাহাফের অনেক ফজিলত রয়েছে এবং তা সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নিচে সূরা কাহাফের ফজিলত দেওয়া হলোঃ 

  • সূরা কাহাফ পড়ার ফলে ঈমান বৃদ্ধি পায়
  • দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ হয়
  • কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
  • দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
  • গুহাবাসীদের মতো বরকত লাভ করা যায়
সূরা কাহাফ এর ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস

সূরা কাহাফ এর ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস

সূরা কাহাফের ফজিলত নিয়ে হাদিসে অনেকভাবে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদেরকে কিভাবে রক্ষা করেন এবং তার অনুসারিদের কিভাবে পথ দেখান তা নিয়ে এই সূরায় আলোচনা করা হয়েছে। নিচে সূরা কাহাফের ফজিলত নিয়ে কয়েকটি সহিহ হাদিস দেওয়া হলোঃ

  • যে ব্যাক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য কিয়ামতের মাঠে একটি নুর থাকবে এবং এটি থাকে আলোকিত করবে। ( সহিহ বুখারি) 
  • যে এই সূরার প্রথম বা শেষ ১০ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। ( সহিহ মুসলিম) 
  • যে ব্যাক্তি শুক্রবার এ সূরা কাহাফ পাঠ করবে তার দেহে একটি নুর বসিয়ে দেওয়া হয় এবং এই নুর পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। 

সূরা কাহাফ কখন পড়তে হয়

সূরা কাহাফ এর ফজিলত সম্পর্কে তো জানতে পেরেছেন। এখন জেনে নিন এই সূরা কখন পড়তে হয়। এই সূরা নির্দিস্ট কোনো সময় নেই যে যখন পড়তে হবে। তবে এটি কিছু সময় আছে যখন পড়লে বেশি ফজিলত পাওয়া জায়। এটি সবথেকে বেশি ফজিলত পাওয়া জায় শুক্রবার এ পড়লে। এ নিয়ে একটি হাদিস ও বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও এটি বৃহস্পতিবার রাতে পড়লে অনেক সাওয়াব পাওয়া জায়। তবে উপরের আমল গুলো ফরজ নয় এবং এগুলো সুন্নত আমল। আপনাকে যে পড়তে হবে তা কিন্তু না। যদি আপনার কোনো কাজ না থাকে তাহলে এই আমল গুলো করতে পারেন। 

আরোও পড়ুনঃ সূরা ইখলাস এর ফজিলত

শুক্রবার সূরা কাহাফ কখন পড়তে হয়

এটি নিয়ে অনেকের মত হলো শুক্রবার এ জুমার নামাজের পর পড়লে এটির অনেক ফজিলত রয়েছে। তবে আপনি চাইলে শুক্রবার ফজরের নামাজের পরে পড়তে পারবেন অথবা আসরের নামাজের পরে বা মাগরিবের নামাজের পড়ে পড়তে পারবেন। 

আরোও পড়ুনঃ সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত

সূরা কাহাফ এর অলৌকিক ঘটনা

সূরা কাহাফে চারটি অলৌকিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

  • আসহাবে কাহাফের ঘটনা: এটি হল একদল যুবকদের ঘটনা যারা তাদের ঈমানের কারণে তাদের শহর থেকে পালিয়ে গিয়ে একটি গুহায় আশ্রয় নেয়। আল্লাহ তাদেরকে ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে রাখেন এবং যখন তারা জেগে ওঠে তখন তারা তাদের শহরে ফিরে আসে। তাদের শহরের লোকেরা তাদেরকে চিনতে পারে না এবং তারা তাদেরকে নবীদের বলে মনে করে।
  • দ্বীপবাসীর ঘটনা: এটি হল একদল লোকের ঘটনা যারা একটি দ্বীপে বসবাস করত। তারা ছিল খুবই ধার্মিক এবং তারা আল্লাহর ইবাদত করত। একদিন, একটি জাহাজ তাদের দ্বীপে এসে পৌঁছায় এবং জাহাজের লোকেরা তাদেরকে তাদের সাথে নিয়ে যায়। দ্বীপবাসীরা জাহাজের লোকদেরকে তাদের ধর্ম সম্পর্কে বলে এবং জাহাজের লোকেরা তাদের ধর্ম গ্রহণ করে।
  • মুসা (আ.) এবং খিজির (আ.) এর ঘটনা: এটি হল মূসা (আ.) এবং খিজির (আ.) এর ঘটনা। মূসা (আ.) খিজির (আ.) এর কাছে জ্ঞান অর্জনের জন্য আসেন। খিজির (আ.) মূসা (আ.) কে কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখান।
  • দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা: এটি হল একদল লোকের ঘটনা যারা দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পায়। তারা ছিল খুবই ধার্মিক এবং তারা আল্লাহর ইবাদত করত। তারা দোজখের আগুনের কাছে পৌঁছলে আল্লাহ তাদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করেন।

সূরা কাহাফের অলৌকিক ঘটনাগুলি আমাদেরকে আল্লাহর ক্ষমতা ও জ্ঞানের কথা মনে করিয়ে দেয়। এগুলি আমাদেরকে সত্যের পথে চলতে এবং মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে।

আরোও পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত

সূরা কাহাফ এর তাফসীর এবং শিক্ষা

সূরা কাহাফ আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। এই সূরাইয় মহান আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং কিভাবে তিনি তার প্রিয় বান্দাদেরকে হেফাজত তা এই সূরায় বর্ণিত হয়েছে। 

  • ঈমানের গুরুত্ব: আসহাবে কাহাফের ঘটনাটি আমাদেরকে ঈমানের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। ঈমান হল আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস। ঈমানের কারণেই আসহাবে কাহাফকে আল্লাহ ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে রাখেন এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেন।
  • সত্যের পথে চলার গুরুত্ব: দ্বীপবাসীর ঘটনাটি আমাদেরকে সত্যের পথে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। দ্বীপবাসীরা ছিল খুবই ধার্মিক এবং তারা আল্লাহর ইবাদত করত। তারা জাহাজের লোকদেরকে তাদের ধর্ম সম্পর্কে বলে এবং জাহাজের লোকেরা তাদের ধর্ম গ্রহণ করে।
  • জ্ঞানের গুরুত্ব: মূসা (আ.) এবং খিজির (আ.) এর ঘটনাটি আমাদেরকে জ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। মূসা (আ.) ছিল একজন নবী, কিন্তু তিনি খিজির (আ.) এর কাছে জ্ঞান অর্জনের জন্য আসেন। খিজির (আ.) মূসা (আ.) কে কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখান।
  • দোয়ার গুরুত্ব: দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনাটি আমাদেরকে দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লোকেরা আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করেন।

আরোও পড়ুনঃ সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত

উপসংহার

সূরা কাহাফের ফজিলত- নিয়ে আপনারা আশা করি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এবং এর সম্পর্কিত হাদিস, এটি কখন পড়তে হয় ঈবং কিভাবে পড়তে হয় তা বুঝতে পেরেছেন। সূরা কাহাফ অনেক গুরুত্তপূর্ণ একটি সূরা। আপনি এই সূরা পড়লে অনেক উপকার পাবেন। বিশেষ করে শুক্রবার এটি পড়ার ফজিলত বেশি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *