আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি এবং কেনো আমরা এই তাসবিহ পাঠ করবো? 

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি

মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করার জন্য অন্যতম একটি তাসবিহ হলো আলহামদুলিল্লাহ। তবে আপনাকে জানতে হবে যে আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি এবং এর ফজিলত সম্পর্কে। কারণ এটির অর্থ এবং ফজিলত জানলে আপনার এটি পাঠ করা সবথেকে কার্যকরী হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভালোবাসেন যারা তার শুকরিয়া আদায় করে এবং তাসবিহ পাঠ করবে। আজকের কন্টেন্টে আমরা আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি এবং এটি কিভাবে পুড়বেন, কিভাবে পড়বেন, কতবার পড়বেন এবং এটি পড়ার ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই দয়া করে পূরো কন্টেন্টি পড়ার অনুরোধ রইলো। 

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি

আলহামদুলিল্লাহ (আরবি: الحمد لله‎‎) একটি আরবি শব্দ যার অর্থ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য”। এটি খুবই শক্তিশালি তাসবিহ যা পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। কারণ সকল অবস্থাতেই আমাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কারণ তার প্রশংসা করলে তিনি আমাদের নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেন এবং আমাদের পার্থিব জীবনে পথচলা অনেক সহজ হয়। আমরা যদি আলহামদুলিল্লাহ অর্থ বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি ভাষায় দেওয়া হলোঃ 

  • বাংলা অর্থঃ আলহামদুলিল্লাহ
  • ইংরেজি অর্থঃ Alhamdulillah
  • জাপানিজ অর্থঃ アルハムドゥリッラ
  • চাইনিজ অর্থঃ 真主阿拉
  • উর্দু অর্থঃ الحمدللہ

শুকুর আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি

শুকুর একটি আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ হলো কৃতজ্ঞতা। আর শুকুর আলহামদুলিল্লাহ অর্থ হলো “সকল কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহর জন্য”। একটি গুরুত্বপূর্ণ বাক্য কারণ এটি আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে সাহায্য করে। কৃতজ্ঞতা একটি শক্তিশালী আবেগ যা আমাদেরকে সুখী এবং সন্তুষ্ট বোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি আমাদেরকে আমাদের জীবনে ভাল জিনিসগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে এবং আমাদের হতাশার উপর মনোনিবেশ করা এড়াতে সাহায্য করতে পারে। 

সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি

সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি? 

মূলত আলহামদুলিল্লাহ কে অনেকভাবেই বলা জায় তার মধ্যে একটি হলো সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। এর অর্থ প্রায় একই এবং একই অর্থ বহন করে। মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আপনি যেকোন একটি ব্যবহার করতে পারবেন। আল্লাহ সব জানেন এবং সব বুঝেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার তাকওয়া দেখেন এবং তিনি আপনাকে যাচাই করেন। আপনি চাইলে যেকোনো একটি দিয়ে শুকরিয়া আদায় করতে পারবেন। 

আরোও পড়ুনঃ আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার অর্থ কি

আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত

আলহামদুলিল্লাহ বলার অনেক ফজিলত রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করলে তিনি খুশি হন এবং তিনি নিয়ামত বাড়িয়ে দেন। তাছারাও সর্বোত্তম দোয়া হলো এটি। কোনো কাজ করার পর বা কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বললে আমাদের ব্যাক্তিগত আত্মবিশ্বাস বেড়ে জায় এবং মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাজের মধ্যে সফলতা দান করেন। 

নিচে আলহামদুলিল্লাহ বলার কয়েকটি ফজিলত দেওয়া হলোঃ 

  • কোনো বিপদ আপদে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করলে বিপদ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে রক্ষা করেন।
  • একবার আলহামদুলিল্লাহ পড়লে জান্নাতে একটি গাছ রোপণ করা হয়।
  • যে ব্যাক্তি বেশি বেশি এই দোয়া পাঠ করে তার জন্য জান্নাতে বিশেষ পুরষ্কার রয়েছে। 
  • পূরো পৃথিবী আর আলহামদুলিল্লাহ এর মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ এর দাম বেশি। কারণ পৃথিবী ক্ষয়ে গেলেও এই তাসবিহ এর সাওয়াব ক্ষয় হয়ে যাবেনা। 
  • যিনি বেশি বেশি এই তাসবিহ আঠ করেন তার দুশ্চিন্তা কম থাকে এবং তিনি অনেক আত্মবিশ্বাস হন।

আলহামদুলিল্লাহ এর ফজিলত নিয়ে হাদিস

আলহামদুলিল্লাহ নিয়ে অনেক সহিহ হাদিস বর্নীত হয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদিস দেওয়া হলোঃ

  1. রাসূল (সঃ) বলেন, যখন আপনি কোনো কাজ করা শেষ করবেন এবং যেকোনো অবস্থাতেই শুকরিয়া আদায় করলে মহান আল্লাহ তায়াল তার নিয়ামতকে আরো বাড়িয়ে দেন। আপনি খাওয়া দাওয়ার পরে, কোনো নেকি কাজ করার পূর্বে, বিপদ অবস্থায় পড়া, অসুস্থ অবস্থায় পড়া  উত্তম 
  2. নিশ্চয় মহান আল্লাহ সে বান্দাকে ভালোবাসেন যে কোনো কিছু পানাহার করার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে। ( মুসলিন ও তিরমিযী) 
  3. মহান আল্লাহ তায়ালার নিজে প্রশংসা করেন এবং তিনি প্রশংসাকারীকে ভালবাসেন। (বুখারী)

আলহামদুলিল্লাহ কখন বলতে হয়

 আলহামদুলিল্লাহ আপনি যেকোন সময় পড়তে পারেন। সব জায়গাতে আলহামদুলিল্লাহ বলাটা অনেক উত্তম। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা আমাদের সবার জন্য কল্যাণকর। আপনি যখন পড়তে পারেনঃ

  • ফরজ নামাজের পর 
  • দোয়া করার আগে
  • অসুস্থ থাকলে আপনি বলতে পারেন।
  • খাবার খাওয়ার পর
  • কোনো সুন্দর কিছু দেখার পর।
  • কোনো ভালো সংবাদ পাওয়ার পর 
  • নফল বা ওয়াজিব সালাত এর পর।

হাচি দেওয়ার পর কেনো আলহামদুলিল্লাহ বলবো? 

হাচি দেওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলা সুন্নত। এছাড়াও হাচি দেওয়ার সময় আমাদের শ্বাসনালী থেকে অনেক ধরণের ক্ষতিকর পদার্থ এবং জীবাণু বের হয়ে জায় যা আমাদের জন্য উপকারী। হাচির ফলে আমাদের শ্বাসনালী পরিষ্কার হয়ে জায়। এটি মহান আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। এই জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত প্রকাশ এবং প্রশংসা করার জন্য আমরা হাচি দেওয়ার আলহামদুলিল্লাহ বলবো। 

আরোও পড়ুনঃ হাসবুনাল্লাহ ওয়ানিমাল ওয়াকিল এর ফজিলত

কেনো আলহামদুলিল্লাহ তাসবিহ পাঠ করবো

আমরা সকলেই জানি আল কোরআন পবিত্ত্র বাণী। যেখানে আমাদের জীবন বিধান নিয়ে মহান আল্লাহ বিস্তারিত বলেছেন। আর এই কোরানের প্রথম শুরু হয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা নিয়ে। প্রথম সূরা প্রথম আয়াত আলহামদুলিল্লাহিরাব্বিল আলামিন। যার অর্থ হলো সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়াও আলহামদুলিল্লাহ পাঠকারী ব্যাক্তিদের কে মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক ভালোবাসেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের রব এবং আমরা তার প্রশংসা করার জন্য আলহামদুলিল্লাহ তাসবিহ পাঠ করবো। 

আরোও পড়ুনঃ সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহী

উপসংহার

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি- এর ফজিলত এবং এটি পড়ার নিয়ম ইত্যাদি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এই কন্টেন্টে। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা অনেক ভালো। প্রত্যাক ব্যাক্তিদের উচিত তার প্রশংসা করা। কারণ তিনি এই পৃথিবী আমাদের জন্য সুন্দর করে বানিয়েছেন। তিনি দয়ালু এবং রিজিকদাতা। আমাদের রিজিক এর ব্যাবস্থা তিনি করে দেন এবং তিনি আমাদের সুস্থতা দান করেন এবং বিভিন্ন ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। তিনিই এই পৃথিবীর পালনকর্তা এবং সৃষ্টিকর্তা। তাকে খুশি করতে পারলে আমাদের ইহকাল এবং পরকাল অনেক সুখের হবে। ধন্যবাদ সবাইকে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *