সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ এবং এর ফজিলত গুলো জেনে নিন

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ

সূরা ফালাকের বাংলা উচ্চারণ এবং এর আরবি উচ্চারণ শিখে রাখা আমাদের সবার জন্য জরুরি। কারণ এটি আমাদের বিভিন্ন ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে এবং জাদুটোনা থেকে সুরক্ষিত রাখে। এটি পবিত্ত্র কোরআনের ১১৩তম সূরা এবং এর আয়াত ৫টি এবং এটি মক্কায় অবর্তীর্ণ হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার সৃস্টি করা কিছু জীব রয়েছে যেগুলো মানুষের ক্ষতিসাধন করে এবং মানুষদের বিপদে ফেলে। আজকের কন্টেন্টে আমরা সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ এবং এর ফজিলত ও আমল নিয়ে আলোচনা করবো। তাই দয়া করে পূরো কন্টেন্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো। 

সূরা ফালাক আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

এটি অনেক ফজিলতী একটি সূরা। বিশেষ করে অশুভ শক্তি থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরি। নিচে এর আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলোঃ 

সূরা ফালাক আরবি উচ্চারণঃ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِى ٱلْعُقَدِ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ। 

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণঃ

  • কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক।
  • মিন শাররি মা খালাক।
  • ওয়া মিন শাররি গাসিকিন ইযা ওকাব।
  • ওয়া মিন শাররি নাফফাসাতি ফিল উকাদ।
  • ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।

বাংলা অর্থ:

  • বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি প্রভাতের পালনকর্তার কাছে।
  • তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে।
  • অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়।
  • গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকরীনিদের থেকে রক্ষা পেতে। 
  • এবং হিংসুকের ক্ষতি থেকে যখন সে হিংসা করে।

সূরা ফালাক এর ফজিলত

সূরা ফালাক এর অনেক ফজিলত রয়েছে যা হাদিসে বর্ননা করা হয়েছে। এই সূরা বিভিন্ন ধরনের শয়তান এবং জীন এর উপদ্রব থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য অনেক কার্যকরী। নিচ তার কয়েকটি ফজিলত দেওয়া হলোঃ 

  • সকাল এবং বিকাল এই সূরা পাঠ করলে থাকে মহান আল্লাহ তায়ালা অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।
  • কালো জাদু থেকে মুক্ত থাকার জন্য বা চিকিথসা করার জন্য এটি অনেক উপকারী।
  • শয়তান এবং জীন এর আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এটি পড়লে ভালো সুফল পাওয়া জায়।
  • হিংসুটে ব্যাক্তিদের থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই সূরা অনেক কার্ক্সকরী।
  • কোনো যায়গায় ভয় পেলে এই সূরা পাঠ করলে ভয় কেটে জায় ইত্যাদি। 

সূরা ফালাক এর ফজিলত সম্পর্কীত হাদিস

এটির ফজিলত নিয়ে বর্ণীত হাদিস নিচে দেওয়া হলোঃ 

  1. হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালবেলা তিনবার সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করবে, তাকে সেই দিন কোনও যাদুকর বা জাদুকরী ক্ষতি করতে পারবে না।” (বুখারী)
  2. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সূরা ফালাক এবং সূরা নাস দুটি শেফার সূরা। যে ব্যক্তি এ দুটি সূরা পাঠ করবে, তাকে কোনও রোগব্যাধি আক্রান্ত করবে না।” (তিরমিযী)
  3. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করবে, তার শরীরে কোনও রোগব্যাধি প্রবেশ করবে না।” (আবু দাউদ)

উপরে উল্লিখিত হাদিস থেকে বুঝা জায় এটি অনেক গুরুত্তপূর্ণ একটি সূরা। তাই এই সূরা বেশি বেশি পাঠ করবেন। 

সূরা ফালাকের শিক্ষা

সূরা ফালাক শব্দটির মূল আরবি শব্দ سورة الفلق‎ থেকে এসেছে যার বাংলা অর্থ হলো সকালের সূর্য। এই সূরা আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে আমরা বিভিন্ন ধরণের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবো। সূরাটিতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে সকল প্রকার ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে সকালের সূর্য, অন্ধকার রাতের, বিষধর প্রাণী এবং ঈর্ষাপরায়ণ মানুষের ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সূরার চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁরই আশ্রয় গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সকল প্রকার অভিশাপ এবং অনিষ্ট থেকে রক্ষাকারী একমাত্ত্র মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি ছাড়া আমাদের কেই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেনা। তাছাড়াও এই সূরা দিয়ে যেকোনো যাদু মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমে নষ্ট করা জায় এবং জাদুগ্রস্থ ব্যাক্তিকে সুস্থ করা জায়। 

ারোও পড়ুনঃ সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত

সূরা ফালাক দিয়ে কিভাবে জাদুগ্রস্থ রোগীর চিকিৎসা করা হয়?

আমাদের বর্তমান সমাজে অনেকে খারাপ লোক রয়েছে যারা কালোজাদুর মাধ্যমে মানুষকে অনেক কস্ট দেয় এমনকি জাদুর মাধ্যমে তাকে পাগল অথবা মৃত্যুর মুখে ফেলে দেয়। এসব জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অথবা এইগুলোর চিকিৎসা করার জন্য সূরা ফালাক অনন্য উপকারী। প্রথমতো যাকে জাদু করা হয়েছে তার উপর সূরা ফালাক পড়ে ফুক দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন ধরণের পানি পড়া এবং তেল পড়া দিয়ে জাদু নষ্ট করার জন্য কাজ করা হয়। তবে সূরা ফালাক ছাড়াও সূরা নাস, সূরা ইখলাস, সূরা ফাতিহা এবং কোরআনের বিভিন্ন ধরণের আয়াত ব্যবহার করা হয় । 

সূরা ফালাক পড়ার নিয়ম কি?

এই সূরা পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই।আ আপনি অন্যান্য সূরা যেভাবে পড়েন এটি ও সেভাবেই পড়তে পারেন। তবে এটি কোরআনের একটি সূরা তাই এটি পড়ার জন্য আপনাকে পবিত্ত্র হতে হবে । এই সূরা দিয়ে চিকিতসা করার জন্য কয়েকটি নিয়ম আপনি অনুসরণ করতে পারেন। যেমন এটি পড়ার পূর্বে দরুদ শরীফ পাঠ করা, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি। এই সূরা দিয়ে আপনি চাইলে যেকোনোনামাজ পড়তে পারবেন এবং এই সূরা পড়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারবেন।

আরোও পড়ুনঃ সূরা ইখলাস এর ৭টি ফজিলত

সূরা ফালাক কখন পড়বো?

আপনি যেকোনো সময় এই সূরা পড়তে পারেন। তবে হাদিসে এসেছে এটি ফজরের নামাজের পড়ে বা সকালে এবং এশার নামাজের পড়ে বা রাতে পড়া অনেক ভালো। মহান আলাহ তায়ালা দুষ্ট জিন এবং শয়তান থেকে হেফাজত করেন। এছাড়াও আপনি কোনো নির্জন জায়গায় ভয় পেলে এটি পড়তে পারেন এবং স্নদেহভাজন কোনো কিছু স্পর্শ করার জন্য এটি পড়তে পারেন এবং কোনো অলৌকিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে এটি পড়তে পারেন। 

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ নিয়ে কিছু প্রশ্নত্তর

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ নিয়ে কিছু প্রশ্নত্তর

প্রশ্ন১ঃ সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ পড়লে কি ভুল হবে?

উত্তরঃ আপনি বাংলা উচ্চারণ দেখে দেখে পড়তে পারেন তবে অবশ্যই আপনাকে সহিহ শুদ্ধভাবে পড়তে হবে।

প্রশ্ন্য২ঃ এটি পড়ার জন্য কি অযু লাগবে? 

উত্তরঃ আপনি যদি কোরআন শরিফ দেখে দেখে পরেন তাহলে কোরআন স্পর্শ করার জন্য অযু লাগবে এবং এটি মুখস্থ থাকলে এটি পড়ার জন্য অযু না হলেও চলবে। তবে অযু অবস্থায় এই সূরা পাঠ করা উত্তম।

প্রশ্ন৩ঃ এই সূরা দিয়ে কি নামাজ পড়া যাবে?

উত্তরঃ অবশ্যই নামাজ পড়া যাবে। 

আরোও পড়ুনঃ সূরা মুলক এর ফজিলত

উপসংহার

সূরা ফালাকের বাংলা উচ্চারণ সহ এর ফজিলত নিয়ে আমরা কন্টেন্টটি সাজিয়েছি। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন এটি কিভাবে পড়তে পারেন। পরিশেশে বলা এই সূরা পাঠ আমাদের জন্য অনেক ভাল। কারণ এটি আমাদের বিভিন্ন ধরণের অভিশাপ ও অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং আমরা অবশ্যই তার কাছেই প্রার্থনা করবো শয়তান এবং দুষ্ট জিনদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। ধন্যবাদ সবাইকে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *