সূরা ইখলাস পবিত্র কোরআন মাজিদের ১১২তম সূরা। এটি খুবই গুরুত্তপূর্ণ সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪টি। এটিকে “তাওহীদের সূরা” বা “একত্ববাদের সূরা” বলা হয় কারণ এটি আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়ে আলোচনা করে। সূরা ইখলাস এর বিভিন্ন ধরণের ফজিলত রয়েছে। এটি কোরআনের ছোট সূরা গুলোর মধ্যে একটি। মহান আল্লাহর সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের কন্টেন্টে আমরা সূরা ইখলাস এর ফজিলত এবং এটি কিভাবে পড়বেন তা নিয়ে আলোচনা করবো।
সূরা ইখলাস এর ৭টি ফজিলত
সূরা ইখলাস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা এবং এটিকে কুরআনের সবচেয়ে সম্মানিত সূরাগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। এটির গুরুত্তপূর্ণ আলোচনার জন্য এটি কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ। এটি পাঠের মাধ্যমে মহান আল্লাহর তাওহিদ বর্ননা করা হয়। এর অনেক ফজিলত রয়েছে যেটি হাদিসে বর্ননা করা হয়েছে। নিচে সূরা ইখলাস এর ৭টি ফজিলত দেওয়া হলোঃ
- সূরা ইখলাস পাঠ করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
- এটি পাঠ করলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।
- এটি পাঠ করলে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- এটি পাঠ করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
- এটি পাঠ করলে মৃত্যুর সময় সহজ মৃত্যু লাভ করা যায়।
- এটি পাঠ করলে কবরে শান্তি লাভ করা যায়।
- এটি পাঠ করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দেবে।
এছাড়াও এটির আরো অনেক ফজিলত রয়েছে। এটি অত্যন্ত সহজ সূরা এবং সহজেই মুখস্ত করতে পারবেন।

সূরা ইখলাস এর ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস
সূরা ইখলাস এর ফজিলত সম্পর্কিত অনেক হাদিস বর্নীত হয়েছে। নিচে কয়েকটি সহিহ হাদিস দেওয়া হলোঃ
- যে ব্যাক্তি সকাল এবং সন্ধ্যা সূরা ইখলাস পাঠ করবে মহান তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবেনা এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ( মুসলিম)
- যে ব্যাক্তি ৩৩ বার এই সূরা পাঠ করবে মহান আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের তিনটি দরজা খুলে দিবেন এবং সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
- য ব্যাক্তি সকাল বিকাল সূরা ইখলাস , সূরা নাস, সূরা ফালাক পাঠ করবে সে কোনো বিপদে পড়বেনা।
- যে ব্যাক্তি ২০০ বার এই সূরা পাঠ করবে মহান আল্লাহ তায়ালা তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
স্বপ্নে সূরা ইখলাস পড়তে দেখলে কি হয়
স্বপ্নে সূরা ইখলাস পড়তে দেখা অনেক ভালো একটি আলামত। অনেকেই আছেন যারা স্বপ্নে বিভিন্ন ধরণের সূরা এবং আমল পড়তে দেখেন। আবার অনেকেই সূরা ইখলাস পড়তে দেখেন। আমরা সকলেই জানি এই সূরা মহান আল্লাহর তায়ালার একত্তবাদ ঘোষণা করে এবং ঈমান কে মজবুত করে। স্বপ্নে সূরা ইখলাস পড়তে দেখা একটি শুভ স্বপ্ন। এটি একটি ইঙ্গিত যে স্বপ্নদ্রষ্টার ইমান শক্তিশালী এবং সে আল্লাহর পথে অবিচল। এটিও একটি ইঙ্গিত যে স্বপ্নদ্রষ্টার জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে। যদি আপনি স্বপ্নে সূরা ইখলাস পড়তে দেখেন, তাহলে আপনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন এবং তাঁর কাছে আরও বেশি ইমান বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করো। তুমি সূরা ইখলাস বেশি বেশি পড়া শুরু করো। সূরা ইখলাস পড়া আপনাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যাবে এবং আপনার জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
সূরা ইখলাস আমাদের কি শিক্ষা দেয়?
সূরা ইখলাস আমাদের অনেক কিছুই শিক্ষা দেয় যা মানলে আমাদের জন্য কল্যানকর। এটি আমাদের বুঝায় মহান আল্লাহ তায়ালা সম্পূর্ন এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনিই আমাদের পালনকর্তা এবং সৃষ্টিকর্তা। তিনি আমাদের রিযিক দেন এবং আমাদেরকে বিপদ থেকে মুক্ত করেন। মহাজগতের কোনো কিছুই তার সমতুল্য নয়। তিনি সময় কে সৃস্টহি করেছেন এবং তাকে সময় দিয়ে তুলনা করা যাবেনা। আমাদেরকে তার দেওয়া জীবন বিধান মানতে হবে। তার কথা মানতে হবে এবং একমাত্ত্র তার ইবাদত করতে হবে। এগুলো মানে তিনি আমাদের জন্য পুরষ্কার এর ব্যাবস্থা রেখেছেন এবং না মানলে শাস্থির ব্যাবস্থা রেখেছেন।
সূরা ইখলাস আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ ও অর্থগুলো কী?
এটির আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ এবং তার অর্থ নিচে দেওয়া হলোঃ
আরবি উচ্চারণঃ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ (١) ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ (٢) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (٣) وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ (
বাংলা উচ্চারণঃ কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস্ সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইয়ুলাদ। ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।
বাংলা অর্থঃ বল, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি জন্মগ্রহণ করেননি এবং জন্ম দেননি। কেউ তাঁর সমতুল্য নয়।
আরোও পড়ুনঃ সূরা মুলক এর ফজিলত
এটি পড়ার নিয়ম কী?
এই সূরা পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তবে এটি সকাল এবং বিকাল পড়া অনেক ভালো। এটি অনেক জনপ্রিয় একটি সূরা। আপনি যখন ইচ্ছা তখন পড়তে পারেন। এটির উচ্চারণ অনেক সহজ এবং সাবলীল। আপনি চাইলে নামাজের সময় পড়তে পারেন অথবা দোয়ার মধ্যে পড়তে পারেন। এটি যত পড়বেন ততোই আপনি বেশি বেশি নেকি অর্জন করবেন।
সূরা ইখলাস এর ফজিলত নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন১ঃ এটি কোথায় অবর্তীর্ণ হয়েছে?
উত্তরঃ এটি মক্কায় অবর্তীর্ণ হয়েছে।
প্রশ্ন২ঃ এর রুকু সংখ্যা কয়টি?
উত্তরঃ ১ টি
প্রশ্ন৩ঃ এটি পাঠ করার জন্য কি কি করতে হবে?
উত্তরঃ আপনি যেকূনো অবস্থাতেই পড়তে পারবেন কিছু নির্দিষ্ট জায়গা এবং অবস্থা ছাড়া।
প্রশ্ন৪ঃ এটি কিভাবে মুখস্ত করবো?
উত্তরঃ এটি অত্যন্ত ছোট সূরা এবং এটি মুখস্ত করা একদম সহজ। কয়েকবার নিয়মিত পড়লেই এটি মুখস্ত হয়ে যাবে।
আরোও পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত
উপসংহার
সূরা ইখলাস এর ফজিলত এবং এটি কিভাবে পড়বেন অ্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কোরআন এর মধ্যে অনেক সূরা রয়েছ যেগুলো অনেক উপকারী। এটি তার মধ্যে একটি। এটি বেশি বেশি পাঠ করলে আমাদের ঈমান শক্ত হয় এবং আমরা শিরক গুনাহ থেকে বাচতে পারবো। মহান আল্লাহ এই সূরা পাঠকারীকে ভালোবাসেন। রাসূল (সঃ) এটি বেশি বেশি পড়তেন এবং তিনি এর উপর নিয়মিত আমল করতেন। এগুলো নিয়ে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি হাদিস উপরে আমরা দিয়েছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি করে সূরা ইখলাস পাঠ করার তাওফিক দান করেন। আমিন।