পবিত্র কোরআন মাজিদের প্রতিটি আয়াত অনেক গুরুত্তপূর্ণ এবং ফজিলতী। তার মধ্যে অন্যতম অনেক গুলো রয়েছে যেমন আয়াতুল কুরসি, আয়াতুল বালাগ, সূরা হাশর এবং অন্যান্য। আয়াতুল বালাগ হলো সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। এই ২দুই আয়াত অনেক ফজিলতপুর্ণ। এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালার মহিমা এবং তার ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বশক্তিমান এবং দয়ালু। আয়াতুল বালাগ বা সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতে আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত সম্পর্কে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর শেষ নবী এবং তিনিই সত্যের পথ দেখানোর জন্য প্রেরিত হয়েছেন। আজকের কন্টেন্টে আমরা এই আয়াতের মহিমা এবং এর ফজিলত এবং এটির আরবি এবং বাংলা উচ্ছারণ সঠিক ভাবে জানবো। তাই দয়া করে পূরো কন্টেন্টি ভালো করে পড়ার অনুরোধ রইলো।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বা আয়াতুল বালাগ কি?
মূলত সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতকেই আয়াতুল বালাগ বলা হয়। তার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এই আয়াত বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সকল মানবজাতির জন্য। মহানবী (সঃ) বলেন আসমানের দরজা দুই সময়ে খোলা হয়েছিলো। একবার খোলা হয়েছিলো যখন সূরা ফাতিহা নাযিল হয়েছিলো এবং ২য় বার খোলা হয়েছিলো যখন এই শেষ দুই আয়াত নাযিল হয়েছিল। এইজন্য এই ২ আয়াত কে আয়াতুল বালাগ বলা হয়। বলা হয়ে থাকে আয়াতুল কুরসির পরে এই ২ আয়াত এর মর্যাদা রয়েছে। যেটি হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ননা করা হয়েছে।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত
এই দুই আয়াতের অনেক ফজিলত রয়েছে। এটি বেশি বেশি পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা পাঠকারী ব্যাক্তির উপর রহমত নাযিল করেন। নিচে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত গুলো দেওয়া হলোঃ
- এ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত, বরকত এবং সাহায্য পাওয়া যায়।
- রাতে ঘুমানোর পূর্বে এই দুই আয়াত পাঠ করলে তাহাজ্জুদ পড়ার সাওয়াব পাওয়া যায়।
- এটি বেশি বেশি পাঠ করলে শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- এগুলো বেশি বেশি পাঠ করলে বিপদ আপদ থেকে রেহাই পাওয়া জায়।
- মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এটি পাঠ করা জরুরি।

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
এই দুই আয়াতের ফজিলত নিয়ে অনেক হাদিস বর্ণীত হয়েছে। নিচে কয়েকটি সহিহ হাদিস দেওয়া হলোঃ
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আয়াতুল বালাগ হলো কোরআনের সেরা আয়াত। যে ব্যক্তি এটি নিয়মিত পড়বে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে।” (তিরমিজি)
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালবেলায় এবং রাতে আয়াতুল বালাগ পড়বে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।” (তিরমিজি)
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালবেলায় এবং রাতে আয়াতুল কুরসী এবং আয়াতুল বালাগ পড়বে, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবে, যিনি তাকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করবেন এবং তার জন্য ১০০০ নেকি লিখবেন এবং তার ১০০০ গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (তিরমিজি)
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে তার জন্য এটিই যথেস্ট। ( বুখারী)
উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা জায় যে এটি অনেক ফজিলতপূর্ণ এবং আমাদের জন্য অনেক ভালো। তাই আমরা বেশি বেশি করে এটি পাঠ করার চেস্টা করবো।
আরোও পড়ুনঃ সূরা মুলক এর ফজিলত
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আরবি এবং বাংলা অর্থসহ
আরবি উচ্চারণ হলোঃ
“لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَآ أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ”
বাংলা উচ্চারণ হলোঃ
“রাসূল তার প্রভুর কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করেছেন, আর মুমিনগণ সকলেই বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং আনুগত্য করলাম। হে আমাদের প্রভু, আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের দিকে ফিরে এসো। তুমিই শেষ গন্তব্য।”
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এর তাফসীর নিয়ে কিছু বইয়ের নাম
এই দুই আয়াত নিয়ে অনেক তাফসিরবিদ্গণ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন কোরআন এবং হাদিসের আলোকে। নিচে কয়েকটি তাফসির এর বই এর নাম দেওয়া হলোঃ
- তাফসির ইবনে কাসির
- তাফসির কুরতুবি
- তাফসির মাযহারি
- তাফসির সাদী
- তাফসির ইবনে আসির
আপনি চাইলে এই তাফসিরের বইগুলো পড়তে পারেন।
আরোও পড়ুনঃ সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত
কিভাবে এই দুই আয়াত পড়বেন?
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ার কোনো নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। আপনি চাইলে যেকোনো ভাবে পড়তে পারবেন। এই আয়াত গুলো তেমন দীর্ঘ নয় এবং আপনি চাইলে মুখস্ত করে নিতে পারেন। এটি প্রতিদিন সকালে বিশেষ করে ফজরের নামাজের পড়ে এবং ঘুমানোর পূর্বে পড়তে পারবেন। তবে এটি পড়া বাধ্যতামূলক নয় আপনি পড়লে পূন্য অর্জন হবে এবং না পড়লে কোনো সমস্যা নেই।
উপসংহার
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এর মর্যাদা এবং এর সম্পর্কিত হাদিস নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার সান্ন্যিধ্য লাভ করার জন্য এটি বেশি বেশি পাঠ করবেন। পবিত্র কোরআন শরীফ এর অন্যতম আয়াত গুলোর মধ্যে এটি বিশেষভাবে মর্যাদাপূর্ণ। ধন্যবাদ সবাইকে।