সূরা মূলক এর ফজিলত গুলোর মধ্যে অন্যতম ফজিলত হলো এটি কবরের আযাব এবং পরকালে শাফায়াতের জন্য মহান আল্লাহ এর কাছে অনুরোধ করে। এটির ফজিলত নিয়ে অনেক সহিহ হাদিস বর্নীত হয়েছে যেখানে মহানবী (সঃ) নিজে এই আমল করতেন এবং তার সাহাবিদেরকে উৎসাহিত করতেন এবং তা উম্মতদের এইগুলো করার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আজকের কন্টেন্টে আমরা সূরা মূলক এর ফজিলত, কখন পড়তে হয় এবং এটি মুখস্ত করার সহজ পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই দয়া করে পূরো কন্টেন্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
সূরা মূলক এর ফজিলত
সূরা মূলক এর ফজিলতগুলো আমাদের সকলের জানা দরকার। কারণ এটি আমাদের পরকালের কঠিন সময়ে আমাদের অনেক সহায়তা করবে। নিচে এটির ফজিলতগুলো জেনে নিনঃ
- কেউ এই সূরা প্রতিদিন পাঠ করলে সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে।
- প্রতি রাত এ এই সূরা পাঠ করলে ফেরেস্তা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।
- হাশরের মাঠে মূলক পাঠকারীকে বাচানোর জন্য মহান আলাহর সাথে বাক-বিনিময় করবে।
- কেউ ৪১ বার এই সূরা পাঠ করলে তার উপর রহমত নাযিল হয় এবং তার ঋন পরিশোধ করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা রাস্তা তৈরি করে দেন।
আরোও পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত

সূরা মূলক এর ফজিলত নিয়ে হাদিস
এই সূরার ফজিলত নিয়ে অনেক হাদিস বর্নীত হয়েছে যেখানে রাসুল (সঃ) এই সূরা গুরুত্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন। মহানবি (সঃ) এর নিয়মিত আমলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। নিচে কয়েকটি হাদিস দেওয়া হলোঃ
- হাদিস১ঃ তিরমিযী শরীফ হতে বর্নীত, রাসুল (সঃ) বলেছেন, কোরআনে একটি সূরা রয়েছে যার আয়াত সংখ্যা ৩০। এই সূরা প্রতিদিন পাঠ করলে হাশরের মাঠে মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে বাক-বিতন্ড করবে যতক্ষন না মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করবেন।
- হাদিস২ঃ তিরমিযি থেকে বর্নীত, যে ব্যাক্তি নিয়মিত এই সূরা পাঠ করবে তাকে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দিবেন।
- হাদিস৩ঃ আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুল (সঃ) বলেন, তোমরা সূরা মুলক মুখস্ত করে রাখো এবং প্রতিদিন পাঠ করো, কারণ এটি তোমাদের কে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবে এবং কিয়ামতের মাঠে এটি তোমার পক্ষে মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে কথা বলবে।
- হাদিস৪ঃ রাসুল (সঃ) সূরা মুলক না পড়ে ঘোমাতে যেতেন না।
- হাদিস৫ঃ বায়হাকি হতে বর্নীত, রাসুল (সঃ) বলেছেন, আমি চাই আমার প্রতিটি উম্মতের অন্তরে সূরা মুলক গেথে থাকুক।
উপরের হাদিস আমরা পড়ে বুঝতে আরি যে এই সূরার ফজিলত অনেক এবং এটি প্রতিদিন পাঠ করা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
সূরা মূলক কখন পড়তে হয়
মহানবী (সঃ) প্রতিদিন রাতে তিনি সূরা মুলক, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি, ্সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত, সূরা কাফিরুন ইত্যাদি পড়তেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় এই সূরা ফজিলত বেশি পাওয়া যায় রাতে পড়লে। অনেক আলেম এবং মাশায়েখগণ একমত হয়েছেন যে এই সূরা রাতে পড়া অনেক উত্তম। তবে দিনে আপনি চাইলে পড়তে পারেন কোনো সমস্যা নেই। আর রাতের সময় টা ঘুমানোর আগে পড়া অনেক ভালো।
আরোও পড়ুনঃ সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত এর ফজিলত
সূরা মূলক মুখস্ত করার সহজ পদ্ধতি
সূরা মূলক মুখস্ত করার সহজ পদ্ধতি নিম্নরূপ:
- প্রথমে উচ্চারণ ও মুখস্তের জন্য একটি সঠিক উচ্চারণ শিখবেন। কোরআন হাফেজ বা সম্প্রদায়ের আদর্শ উচ্চারণ শিখানোর মাধ্যমে আপনি সূরা মূলকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারবেন।
- সূরা মূলকে মুখস্ত করতে প্রতিটি আয়াত পড়তে শুরু করুন। প্রতিটি আয়াতের পরে আলিফ বা হরফ দ্বারা শুরু করে মুখস্ত করুন। এটি মুখস্তে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ম।
- আপনি যদি কোরআনের মুখস্ত করার জন্য একটি মুখস্ত কিতাব বা অ্যাপ ব্যবহার করতে চান, তবে এগুলি সমর্থন করবেন। মুখস্ত কিতাব বা অ্যাপ আপনাকে সূরা মূলকে প্রতিটি আয়াতের আগে আলিফ বা হরফ প্রদর্শন করবে। আপনি আগে তাদের মুখস্ত করবেন এবং এরপর সূরা মূলকে পড়তে শুরু করবেন।
- মুখস্ত করার সময় নির্দিষ্ট আয়াত গুলি কোরআন হাতে দেখে মুখস্ত করতে পারেন। এটি আপনাকে সূরা মূলকে সঠিকভাবে মুখস্ত করার সহজ উপায় প্রদান করবে।
উপরের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে আপনি সূরা মূলকে সঠিকভাবে মুখস্ত করতে পারবেন। আপনি সঠিক উচ্চারণ এবং মুখস্ত প্রশিক্ষণ পেয়ে আপনার পাঠকে অনুশীলন করতে পারেন এবং আরও দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
কেন আপনি এই সূরা প্রতিদিন পাঠ করবেন?
পবিত্ত্র কোরআনের ১১৪টি সূরা মধ্যে এই সূরা অনেক গুরুত্তপূর্ন। প্রিয়নবী (স:) এর প্রতিদিনের আমলগুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। তিনি প্রতি রাতে এই সূরা পাঠ করতেন। আর এই সূরা আপনাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবে। আর আমরা সকলেই জানি কবরের জীবন অত্যন্ত ভয়াবহ এবং কঠিন। আর যাদেরকে আযাব দেওয়া হয় তাদের জীবন অনেক কস্টকর হয়ে উঠে। তবে আপনি যদি নিয়মিত সূরা মুলক পাঠ করেন তাহলে এটি আপনাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। আর হাশরের মাঠে এটি আপনার জন্য সুপারিশ করবে এবং আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। এইজন্য এটি বেশি বেশি পাঠ করবেন।
সূরা মূলক এর ফজিলত নিয়ে কিছু প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন১ঃ এটি কোরআনের কততম সূরা এবং এর আয়াত সংখ্যা কত?
উত্তরঃ কোরআনের ৬৭তম সূরা এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩০।
প্রশ্ন২ঃ সূরা মুলক এর রুকু সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ২টি রুকু রয়েছে।
প্রশ্ন৩ঃ এটি কখন এবং কতবার পড়া উত্তম?
উত্তরঃ এটি রাতে ঘুমানোর আগে পড়া উত্তম এবং আপনি যতবার ইচ্ছা ততবার পড়তে পারবেন।
প্রশ্ন৪ঃ এটি পড়তে হলে কি অযু থাকা লাগবে?
উত্তরঃ যদি আপনি কোরআন শরীফ থেকে পড়েন তাহলে অযু লাগবে আর যদি আপনি এটি মুখস্ত পড়েন তাহলে অযু না থাকলেও হবে। তবু অযু অবস্থায় পড়া উত্তম।
প্রশ্ন৫ঃ এই সূরা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে?
উত্তরঃ এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
উপসংহার
সূরা মূলক এর ফজিলত নিয়ে আমরা পূরো কন্টেন্ট এ আলোচনা করেছি। এছাড়াও আমরা এটির পড়ার সময় এবং এটি কিভাবে মুখস্ত করবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি প্রতিদিন ঘোমানোর আগে পাঠ করবেন এবং পড়ার আগে কয়েকবার দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করতে পারবেন। তারপর আউযুবিল্লাহিমিনাস শাইতানির রাজিম পড়ে সূরা মুলক পড়া শুরু করবেন।
2 Comments on “সূরা মূলক এর ফজিলত-এটি কখন পড়বেন এবং কিভাবে মুখস্ত করবেন”