সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত- এটিকে কেনো কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয় 

সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত

পবিত্র কোরআন মাজিদের মধ্যে ১১৪টি সূরা রয়েছে। সব গুলো সূরা অনেক গুরুত্তপূর্ণ কিন্তু তার মধ্যে কিছু কিছু সূরা রয়েছে যেগুলর তুলনামূলক অনেক মর্যাদাপূর্ণ এবং ফজিলতী। তার মধ্যে একটি সূরা অনেক ভালো যার নাম হলো সূরা ইয়াসিন। এটি পবিত্র কোরআন এর ৩৬তম এবং এর আয়াত সংখ্যা ৮৬। আজকের কন্টেন্টে আমরা সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত এটি পড়ার সম্পর্কে হাদিস এবং এটি কিভাবে পড়বেন এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই দয়া করে পূরো কন্টেন্টি পড়ার অনুরোধ রইলো। 

সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত

এই সূরা পাঠ করার অনেক ফজিলত রয়েছে যা হাদিসে বিশেষভাবে বর্নীত হয়েছে। এটির ফজিলত এর কারণে এটির আরেক নাম হলো কাযিরা। নিচে সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত দেওয়া হলোঃ 

  1. কেউ যদি এই সূরা ১ বার পাহ করে তাহলে তার আমল নামায় ১০ বার কোরআন খতম এর সাওয়াব লিখে দেওয়া হয়।
  2. কেউ যদি সূরা ইয়াসিন রাতে ঘুমানোর আগে পাঠ করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল গুনাহ থেকে মাফ করে নিস্পাপ অবস্থায় ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেন।
  3. এটি পড়ার পর মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কোনো কিছু চাইলে তিনি তার চাওয়া বা আশা পূরণ করেন।
  4. কেউ যদি মৃত্যু যন্ত্রনায় ভুগে আর তার পাশে এই সূরা পাঠ করে তাহলে তার যন্ত্রনা লাঘব হয়।
  5. কেউ বেশি বেশি এই সূরা পাঠ করলে জান্নাতে তার জন্য ৮টি দরজা খুলা থাকবে এবং সে যেকোনো দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবে।
সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত

সূরা ইয়াসিন এর ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস

এটির ফজিলত নিয়ে অনেক সহিহ হাদিস বর্ননা হয়েছে। যেখানে প্রিয়নবী (সঃ) আলোচনা করেছেন। নিচে ২টি হাদিস নিয়ে বর্ননা করা হলোঃ 

  • হাদিস১ঃ রাসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশী করার জন্য সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, মহান আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে দেন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ দেখান।
  • হাদিস২ঃ রাসুল(সঃ) বলেছেন, যে সকাল এটি পাট করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে থাকবে আর যে সন্ধায় পাঠ করবে সে সারারাত সুখে থাকবে।

ফজরের পর সূরা ইয়াসিন পড়ার ফজিলত 

ফজরের পর সূরা ইয়াসিন পড়ার ফজিলত নিয়ে তেমন কোনো হাদিসে পাওয়া যায়নি। তার মানে এটা নয় যে এটি পাঠ করা যাবেনা। তবে এক হাদিসে পাওয়া যায় এটি সকালে পড়লে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে এবং শান্তিতে রাখেন। আপনি চাইলে ফজরের পরে এই সূরা পড়তে পারেন এবং মহান আল্লাহ এর কাছে আপনার মনের ইচ্ছার কথা জানাতে পারেন। মহান আল্লাহ চাইলে তিনি আপনার মনের আশা পূরণ করতে পারবেন। 

আরোও পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি উচ্চারন এবং ফজিলত

সুরা ইয়াসিন ৪১ বার পড়লে কি দোয়া কবুল হয়?

এই ব্যাপারে তেমন কোনো হাদিস পাওয়া যায়নি। দোয়া কবুল হওয়া বা না হওয়া তা সম্পূর্ন মহান আল্লাহ তায়ালার উপর নির্ভর করে। তিনি বান্দাদের তাওাক্কুল দেখে দোয়া কবুল করেন। আপনি নামাজ পরলেন না, অন্যের হক মেরে খেলেন, মজলুমদের উপর অবিচার করলেন, সুদ খেলেন, ঘুষ খেলেন আবার মহান আল্লাহ এর কাছে দোয়া করলে। আপনি ৪১ বার কেনো ৪৪১ পরলেও দোয়া কবুল হবেনা। কারণ দোয়া কবুল হওয়ার অনেক শর্ত রয়েছে যা আপনাকে মেনে চলতে হবে। 

সূরা ইয়াসিন ৭ বার পড়ার ফজিলত

সূরা ইয়াসিন আপনি যতবার পড়েন না কেনো হাদিসে যে ফজিলত গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলোই প্রাপ্য হবে। সাতবার পরলে আলাদা কোনো ফজিলত আছে তা নিয়ে কোনো হাদিস বর্নীত নেই। আবার সাতবার পড়লেও যে ক্ষতি হবে তা কিন্তু না। এগুলো নিয়ে আমাদের বেশি বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। আপনি যত বেশি তেলাওয়াত করবেন ততো বেশি নেকি অর্জন করবেন। 

সূরা ইয়াসিন ৫৮ নং আয়াত ফজিলত

এই আয়াতের বিশেষ কোনো ফজিলত নেই। এই আয়াতে বলা হয়েছে, 

“করুণাময় পালনকর্তার (পক্ষ) থেকে তাদেরকে যা বলা হবে তা হচ্ছে- সালাম”। এখানে যারা জান্নাতি তাদেরকে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদেরকে অনেক ভালোবাসেন এবং তাদের কে তার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন। যারা মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ এবং নিষেধ মেনে চলবে তাদেরকে তিনি জান্নাত দান করবেন এবং তার পক্ষ থেকে সালাম প্রদান করা হবে। 

সূরা ইয়াসিন কে কেনো কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়

সূরা ইয়াসিন এর ফজিলতের কারণে এটিকে কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়। এই সূরাতে ইসলামের বিভিন্ন ধরনের দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে মহান আল্লাহ তায়ালার একত্তবাদ, তার মহিমা এবং গুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও এখানে মৃত্যুর পর পুর্নজীবিত করা, পাপ কাজের শাস্তি এবং পূন্য কাজের শাস্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

উপসংহার

সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত– এর সম্পর্কে হাদিস এবং এটি নিয়ে অনেক গুরুত্তপূর্ণ আলোচনা আমরা করেছি। এই সূরা অনেক অর্থবহুল এবং মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় হওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম। আপনার মনের আশা পূরন করার জন্য এবং মহান আল্লাহ এর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য এটি বেশি বেশি পড়তে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে। 

4 Comments on “সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত- এটিকে কেনো কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয় ”

  1. জনাব মুফতী সাহেব আপনার নিকট আরজ এই যে, কোন এক আলেম তার বয়ানে বলছিলেন যে কেও যদি টানা চল্লিশদিন তার বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ইয়াসিন পাঠ করে তাহলে তার বাবা-মার কবরের আজাব মাফ হয়ে যাবে, এ ক্ষেত্রে তিনি বুখারীর হাদিস দারা দলিল পেশ করছেন,এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে যে এ কথাটা কি সঠিক, আর উনার দেয়া দলিলটা কি সহিহ?? কোরআন ও হাদিসের আলোকে জানিয়ে উপকৃত করবেন,,

    1. ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত এর জন্য। কারিগরী ক্রুটির জন্য দেরিতে উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। টানা ৪০ দিন এই আমল টা সহিহ নয় এবং এর সম্পর্কে বর্ণীত হাদিসটি দুর্বল। এর প্রসংে কোনো সহিহ হাদিস নেই।
      গোরস্থান কুরআন তিলাওয়াতের স্থান নয়। কুরআন মৃত মানুষের কোন উপকার করবে না। কেননা কুরআন এসেছে জীবিত মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের দিকনির্দেশনার জন্য; মৃত মানুষের জন্য নয়। ধন্যবাদ আপনাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *