ইতিকাফ করা সুন্নত। আল্লাহর রাসূল (সঃ) ইতিকাফ করতেন। তবে ইতিকাফের বিভিন্ন ধরণের নিয়ম ও নীতি রয়েছে। ইতিকাফের নিয়ত আরবি এবং বাংলা রয়েছে এবং এটির ফজিলত এবং আরো কিছু শর্ত রয়েছে যেগুলো আমাদের জানা জরুরি। কারণ সঠিকভাবে ইতিকা পালন না করতে আমাদের ইতিকাফ কবুল হবেনা। আজকের কন্টেন্টে আমরা ইতিকাফের নিয়ম,ফজিলত,শর্ত এবং সময়সীমা এবং ইতিকাফ এর নিয়ত আরবি এবং বাংলা উভয়টি জানবো। তাই দয়া করে পূরো কন্টেন্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ইতিকাফের নিয়ত আরবি এবং বাংলা অর্থসহ
ইতিকাফ করার জন্য সবথেকে বেশি গুরুত্তপূর্ণ হলো এটির নিয়ত করা। কারণ যেকোনো আমল কতটুকু কার্যকর হবে তা নির্ভর করে তার নিয়তের উপর। নিচে ইতিকাফের নিয়ত আরবি এবং বাংলা অর্থসহ দেওয়া হলোঃ
আরবি নিয়তঃ نَوَيْتُ الاعْتِكَافَ للهِ تَعَالَى
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুওয়া ইতিকাফি লিল্লাহি তায়ালা।
বাংলা অর্থঃ আমি আল্লাহর জন্য ইতিকাফে নিয়ত করলাম
এই নিয়ত করার পর আপনি ইতিকাফ শুরু করে দিতে পারেন। আপনি চাইলে এটি বাংলাতে অথবা আরবিতে পড়তে পারেন।
ইতিকাফের ফজিলত
ইতিকাফের ফজিলত অনেক রয়েছে। মহান আল্লাহ এবং তার রাসূল(সঃ ইতিকাফ পালনকারীদের ভালবাসেন। নিচে কয়েকটি ফজিলত দেওয়া হলোঃ
- আল্লাহর প্রতি একাগ্রতাঃ যারা ইতিকাফ করেন তাদের মহান আল্লাহর অনেক কাছে থাকেন। তারা সারাদিন মহান আল্লাহর তাসবিহ পাঠ, কোরআন তেলাওয়াত করেন যা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় কাজ।
- গুনাহ মাফের সুযোগঃ ইতিকাফ এমন একটি আমল যেটির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। ইতিকাফকারীর দোয়া তিনি কবুল করেন।
- ধার্মিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়ঃ ইতিকাফকারীরা সব সময় কোরআন এবং হাদিস চর্চা করেন যার ফলে তাদের ইসলাম সম্পর্কে ভালো জ্ঞান উন্নয়ন হয় এবং তারা বেশি বেশি ইবাদত পালনে আগ্রহী হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস বর্নীত হয়েছে। নিচে ইতিকাফ নিয়ে ২টি হাদিস দেওয়া হলোঃ
- হাদিস নং ১ঃ বুরাইদাহ (রাঃ) হতে বর্নীত, রাসূল (স:) বলেনযে ব্যক্তি ইতিকাফে ঢুকে থাকে, সে নির্ধারিত সময় এবং সঠিকভাবে ইতিকাফ অবলম্বন করে তার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (সুনান আবু দাউদ)
- হাদিস নং ২ঃ আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি কেউ ইতিকাফে থাকতে চায়, তাহলে সে চারটি মসজিদে ইতিকাফ করতে পারে। মাসজিদুল হরাম, মাসজিদুল নবী, মাসজিদুল আকসা, এবং আপনার নিজের মাসজিদ।” (সহীহ বুখারী)
ইতিকাফের সময়সীমা
ইতিকাফের সময়সীমা নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। সহিহ হাদিস হতে জানা যায় রাসূল(সঃ) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন তিনি ইতিকাফ পালন করতেন। এই সময়সীমা নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও কিন্তু সাধারণত ইতিকাফের সময়সীমা তিন দিন হলেও একটি রাত্রি সংযুক্ত করে এক তিনদিনের ইতিকাফ সম্পন্ন করা হয়। ইতিকাফের প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে এটি কতদিন।
আরোও পড়ুনঃ রোযা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এবং হাদিস
ইতিকাফের শর্ত
ইতিকাফ পালন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইতিকাফের শর্তগুলো আপনাকে মানতে হবে। এই শর্তগুলো আপনি না মানে আপনার ইতিকাফ হবেনা। নিচে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হলোঃ
- সহিহ নিয়তঃ ইতিকাফ করার জন্য আপনি নিয়ত করতে হবে। ইতিকাফের নিয়ত আরবি এবং বাংলা পড়তে পারেন।
- মসজিদে অবস্থানঃ ইতিকাফের জন্য আপনাকে মসজিদে অবস্থান করতে হবে। আপনি যতদিন ইতিকাফ করার ইচ্ছা ততোদিন সুধুমাত্ত্র মসজিদে থাকতে হবে।
- গুনাহ থেকে বেচে থাকাঃ ইতিকাফ করার সময় আপনাকে গুনাহ থেকে বেচে থাকতে হবে। কারণ যেহেতু আপনি মসজিদে অবস্থান করবেন এটি পবিত্ত স্থান এখানে পাপকাজ করলে আপনার ইতিকাফ হবেনা।
ইতিকাফ কত প্রকার?
ইতিকাফ সাধারনত ২ প্রকার। যথাঃ ১ঃ ওয়াজিব ইতিকাফ ও ২; সুন্নত ইতিকাফ
ওয়াজিব ইতিকাফঃ কোনো ব্যাক্তি যদি কোনো মানঅত পূরণ করার জন্য ইতিকাফ করার নিয়ত করে তাহলে তার জন্য ইতিকাফ পালন করা ওয়াজিব। অথবা সুন্নত ইতিকাফ ভংগ করলে তার জন্য পরবর্তিতে এটি কাযা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। এই ইতিকাফ এর সময়সীমা ১-১০ দিন পর্যন্ত অয়ে থাকে।
সুন্নত ইতিকাফঃ রাসূল ( সঃ) রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ পালন করতেন। এটি মানা আমাদের জন্য সুন্নত।
আরোও পড়ুনঃ রিজিক বৃদ্ধির দোয়া পড়ুন এবং আপনার রিজিক বাড়িয়ে নেন
এতেকাফ অবস্থায় কি কি করা নিষেধ
অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো ইতিকাফ অবস্থায় করা যাবেনা। নিচে দেওয়া হলোঃ
- মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবেনা। আপনি বিনা কারণে মসজিদের বাইরে গেলে ইতিকাফ হবেনা।
- জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যাবহার কর যাবেনা।
- মসজিদের কোনো প্রশাসনিক কাজে লিপ্ত হওয়া যাবেনা।
- কোনো ধরণের ব্যাবসায়িক কাজে লিপ্ত হওয়া যাবেনা ইত্যাদি।

মহিলাদের ইতিকাফের নিয়ম
মহিলাদের ইতিকাফ পালন করা মুস্তাহাব। যেহেতু তাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি নেই তাই তারা ঘরে বসে অন্দরমহলে ইতিকাফ পালন করতে পারেন। ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাংসারিক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। এছাড়াও তারা তাসবিহ পাঠ,কোরআন তেলাওয়াত এবং জিকির করতে পারেন।
উপসংহার
ইতিকাফের নিয়ত আরবি এবং বাংলা উভয়ভাবে পড়তে পারবেন। ইতিকাফ পালন করা আমাদের সবার জন্য অনেক ভালো। কারণ ইতিকাফকারিদের মহান আল্লাহ পছন্দ করেন এবং তাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। এছাড়াও ইতিকাফের ফজিলত অনেক রয়েছে যা আমরা উপরে বর্ণ্না করেছি। রমজান মাসের ইতিকাফ অনেক গুরুত্তপূর্ন। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে ইতিকাফ পালন করার তৌফিক দান করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।