রোজা বা রমজান হলো মুসলিম জাহানের সব থেকে বরকতময় মাস। রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত এবং হাদিস রয়েছে যেখানে মহান আল্লাহ এবং তার রাসূল (সঃ) রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। এবং এটি মহান আল্লাহ আমাদের জন্য ফরজ করেছেন। কারণ এটি সংযমের এবং ধৈর্যের মাস। মহান আল্লাহ রোজাদার ব্যাক্তিদের অনেক পছন্দ করেন। আজকের কন্টেন্ট এ আমরা রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত, এর ফজিলত সহ আরো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করবো। তাই দয়া করে পূরো কন্টেন্টি পড়ার অনুরোধ রইলো।

রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত গুলো কি কি
রোযা সম্পর্কে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত রয়েছে। যেখানে মহান আল্লাহ রোযার ফজিলত এবং নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সূরা বাকারার ১৮৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“তোমরা রোযার মাসে তামাম রাতগুলোতে বিশেষভাবে সালাত আদায় করো, তোমরা আল্লাহর কাছে যা আশা করো তাই পাবে, রাতে তোমরা দোয়া করো”
সূরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“ হে মুমিনগণ তোমরা রোযার দিনে তাই করো যা বলেছি। তা ছাড়াও রোজার দিনগুলোতে তোমরা অশ্লীল কথা বলবে না, অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ করবে না। তোমরা আর জগতের মানুষের কোনো ক্ষতি করবেনা যার কারণে মানুষ কস্ট পায়”
সূরা বাকারার ১৮৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“ঈমানদাররা রোযা মাসে রোযা রাখে যদি এই সময় এ কারো স্বাস্থে প্রতিবন্ধকতা থাকে”
সূরা বাকারার ২৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“তাই যে রোযা মাসে রোযা রাখে সে নিরাপদে থাকে এবং সে মহান আল্লাহর সাথে সংযুক্ত থাকে”
সূরা বাকারার ১৮৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা রোজার মাধ্যমে পরিশুদ্ধি পাবে।”
রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত অনেকগুলো রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি আয়াত নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
আরোও পড়ুনঃ হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে যেখানে রাসূল (সঃ) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। নিচে কয়েকটি হাদিস দেওয়া হলোঃ
- আবূ হুরাইরাহ (রা.) বর্ণিত করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জীবনকে সত্যিকারের বদলে একটি মাস হলো রমজান।” (বুখারী)
- আবূ হুরাইরাহ (রা.) বর্ণিত করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে কোন মুসলিম যখন রমজানের রোজা রাখে, তখন তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (বুখারী)
- আবূ হুরাইরাহ (রা.) বর্ণিত করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং আশা সম্পন্নতায় রমজানের রোজা রাখে, তার সকল গুনাহ মাফ করা হয়ে যায়।” (তিরমিযী)
- আবূ হুরাইরাহ (রা.) বর্ণিত করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রমজান তোমাদের উল্লাসযোগ্য মাস, তাতে আল্লাহর হুকুমে সকল জান্নাতের দরজা খোলা হয়ে যায়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোও শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়”(তিরমিযী)
এই হাদিসগুলি প্রমাণ করে দেয় যে রমজান মাসটি অত্যন্ত মুক্তিদায়ক এবং পূর্ণাঙ্গ বরকতে ভরা। এই মাসে রোজা রাখার ফজিলত অসামান্য এবং অসাধারণএবং আল্লাহর কাছে মাফিরত এবং শান্তির উপায় হিসেবে কাজ করে।

রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত
রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। রোযাদার ব্যাক্তিদের মহান আল্লাহ অনেক ভালোবাসেন এবং তিনি নিজে এর প্রতিদান দিবেন। রোযা রাখার মাঝে আমরা দুনিয়া এবং আখিরাতে অনেক লাভবান হতে পারবো। নিচে কয়েকটি ফজিলত দেওয়া হলোঃ
- রোযা রাখার মাধ্যমে আমাদের ধৈর্য অনেক বাড়ে।
- মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক প্রিয় হওয়া জায়।
- আমাদের তাকওয়া অর্জন হয়।
- এক অপরের প্রতি ভ্রাতিত্ব তৈরি হয়।
- অনেক নেকি হাসিল করা যায়।
- বিভিন্ন ধরণের বিপদ থেকে মহান আল্লাহ রক্ষা করেন।
রমজানের দোয়া সমূহ
রমজানে বিভিন্ন ধরনের দোয়া রয়েছে যেগুলো চর্চা করলে মহান আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেন। নিচে রোযা রাখার দোয়া,ইফতারের দোয়া এবং ইতিকাফ করার দোয়া দেওয়া হলোঃ
ইফতারের দোয়া:
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ
Transliteration: Allahumma laka sumtu wa bika amantu wa ‘ala rizqika aftartu.
- অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার জন্যই আমি রোজা রেখেছি, আপনি বিশ্বাস করেছি এবং আপনার রিজিক দ্বারা আমি ইফতার করছি।
সেহরীর দোয়া:
وَبِصَوْمِ غَدٍ نَّوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ
Transliteration: Wa bisawmi ghadin nawaitu min shahri Ramadan.
- অর্থ: আমি নিশ্চিত করেছি যে, আমি আগামী রমজান মাসের রোজা রাখবো।
ইতিকাফের দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي نَوَيْتُ الِاعْتِكَافَ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ لِلَّهِ تَعَالَى
Transliteration: Allahumma inni nawaitu l-i’tikafa fi hadha’l-masjid lillahi ta’ala.
- অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার জন্যই আমি এই মসজিদে ইতিকাফ করার নিয়ত করলাম।
আরোও পড়ুনঃ মনের আশা পূরণের দোয়া ও আমল
কেনো রোযা রাখবেন?
রোযা রাখা ফরজ এবং বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া রোযা ত্যাগ করা যাবেনা। রোযা আমাদের কে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে। রোযাদারদের কে মহান আল্লাহ নিজে পুরস্কিত করবেন। যারা রোযা ত্যাগ করে তাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা তার রহমত থেকে বঞ্চিত করেন। তাই আমরা রোযা রাখবো।
রোযা না রাখলে কি হবে?
যারা রোযা রাখেনা তারা কখনোই ভালো মুসলিম হতে পারেনা। ভালো মুসলিম হওয়ার জন্য আপনাকে রমজান মাসে অবশ্যই রোযা রাখতে হবে। আর রোযা ফরজ হওয়ার কারণে আপনাকে রোযা অবশ্যই রোযা রাখতে হবে। নাহলে আখিরাতে কঠিন শাস্তির মূখোমুখি হতে হবে।
উপসংহার
রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত এবং হাদিস ইত্যাদি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। রমজান মাসে আপনি বেশি বেশি নামাজ পড়বেন এবং কোরআন তেলাওয়াত করবেন। এতে আপনার জন্য মঙ্গল দুনিয়া এবং আখিরাতে। এটি অত্যন্ত বরকতময় মাস প্রতিটি মুসলিমদের জন্য। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে রোযা রাখার তৌফিক দান করেন। আমিন।
One Comment on “রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত, হাদিস এবং রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন। ”