যাদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তাদের কে যাকাত অবশ্যই দিতে হবে। তবে যাকাত দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। যে নিয়মগুলো আপনি অনুসরণ করে যাকাত আদায় করতে পারবেন। যাকাত দিলে আপনার সম্পদ বিশুদ্ধ হয় এবং মহান আল্লাহ এর কাছে আপনার যাকাত সম্পর্কে জবাবদিহিতা থেকে বাচতে পারবেন। আজকেই এই কন্টেন্ট এ আমরা যাকাত দেওয়ার নিয়ম,কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ,যাকাত কাকে দেওয়া যাবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই মনযোগ দিয়ে পূরো কন্টেন্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

যাকাত দেওয়ার নিয়ম
যাকাত দেওয়ার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। আমরা সকলেই জানি যার কাছে অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার জন্য যাকাত দেওয়া ফরজ। তবে আপনাকে যাকাত দিতে হলে আপনার সকল জমাকৃত সম্পদ এর হিসাব করে তার ২.৫% সম্পদ যাকাত দিতে হবে। নিচে যাকাত দেওয়ার নিয়ম দেওয়া হলোঃ
- আপনি যখন নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন তখন আপনার জমাকৃত সম্পদ এর হিসাব করবেন।
- যে বছরে যাকাত দিবেন তার জন্য আপনি একটি খাতা নিয়ে বসবেন। এবং পূরো বছর এর উপার্জন এর মধ্যে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার হিসাব করবেন। আপনার কি পরিমাণ সোনা,রুপা এবং টাকা রয়েছে তার হিসাব করবেন।
- তারপর আপনার ঋণের পরিমান বের করবেন আপনি ঠিক কতো টাকা ঋনী। তখন জমাকৃত সম্পদ থেকে ঋণ এর সমপরিমাণ টাকা বাদ দিবেন।
- হিসাব করার পড় যে পরিমাণ টাকা আসবে তার ২.৫% যাকাত প্রদান করতে হবে যাদের কে যাকাত দেওয়া জায়েজ।
আরোও পড়ুনঃ রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
কিছু কিছু সম্পদ রয়েছে যেগুলোর উপর আপনার যাকাত প্রদান করতে হবে। নিচে তা দেওয়া হলোঃ
- ব্যবসায়িক প্রতিষ্টানঃ আপনি যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোনো প্রতিষ্টান প্রতিশটা করেন হতে পারে সেটি খামার,দোখান,জমিন ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি এইগুলার থেকে আপনার যখন নিসাব পরিমাণ এর তজেকে বেশি আসা শুরু করবে তখন আপনাকে সেটির জন্য যাকাত প্রদান করতে হবে।
- নগদ অর্থঃ আপনার কাছে প্রজনীয় অর্থ ছাড়া আরো অর্থ জমা থাকে আর সেটি যদি নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে তার জন্য যযাকাত দিতে হবে।
- সম্পদঃ আপনার কাছে ফসলি জমি ছাড়া আরো অতিরিক্ত জমি থাকে যেগুলো আপনার প্রয়জনের তুলনায় বেশি তাহলে তার জন্য যাকাত দিতে হবে।
স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম
আপনার কাছে স্বর্ণ থাকলে আপনাকে তার জন্য যাকাত দিতে হবে। অনেক আলেমগণ বলেন আপনার কাছে ৭.৫ ভরি এর বেশি যদি স্বর্ণ থাকে তাহলে তার বাজার মূল্য হিসাব করে সেই টাকার ২.৫% যাকাত প্রদান করতে হবে।

টাকার যাকাত দেওয়ার নিয়ম
টাকা বলতে আপনার কাছে নগদ অর্থ যেগুলো আছে সেগুলো। অর্থাৎ আপনি সারাবছর এ টাকা জমালেন সেই টাকা যদি নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে তার যাকাত দিতে হবে। তবে আপনি এই বছরে যদি ঋণী হন তাহলে সমপরিমাণ টাকা বাদ দিতে হবে আপনার জমাকৃত টাকা থেকে বাদ দিতে হবে। অবশিষ্ট টাকা বর্তমান হিসাব অনুযায়ি ৫oooo টাকার উপরে থাকলে আপনাকে তার জন্য যাকাত দিতে হবে।
ফসলের যাকাত দেওয়ার নিয়ম
ফসলের যাকাত দেওয়ার জন্য আপনাকে কিছু বিষয় নিয়ে জানতে হবে। আপনি ফসল ফলন করলেই যে যাকাত দিতে হবে তা কিন্তু না। মহান আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্ত্র তাদের জন্য যাকাত ফরজ করেছেন যাদের সামর্থ্য আছে। আপনি যে পরিমাণ ফসল ফফলান তা আপনার প্রয়োজন এর জন্য সমপরমাণ হয় তাহলে তার জন্য যাকাত প্রদান করতে হবেনা। তবে আপনার প্রয়োজনের থেকে বেশি হয় আর আপনি তা জমা করে রাখেন এবং ১ বছর পর সেগুলো নিসাব পরিমাণ বা তার থেকে বেশি হয় তাহলে তার জন্য যাকাত প্রদান করতে হবে।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে
কোরআন মাজিদে বর্নীত হয়েছে যাকাত ৮ শ্রেণির লোকদেরকে দেওয়া যাবে। সূরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন যে কাদেরকে যাকাত দিতে হবে নিচে তা বর্ণনা করা হলোঃ
- মিসকিনঃ যাদের নিজেদের সম্বল নেই। যারা অন্যদের উপর নির্ভরশীল এবং যাদের কোনো নিজসস বাসস্থান নেই
- ফকিরঃ যারা খুব কম উপার্জন করে এবং এই উপার্জন এর মাধ্যমে তাদের সংসার চলেনা।
- ঋণগ্রস্ত ব্যাক্তিঃ যিনি ঋণগ্রস্থ এবং তার এই ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই।
- যাকাত আদায়কারী কর্মী এবং প্রতিষ্টানঃ যারা যাকাত আদায় করে বন্টন করে এইসকল কর্মীদের যাকাত দিতে হবে।
- নব্য মুসলিমঃ যিনি নতুন মোসলমান হয়েছেন এবং বর্তমানে তার কোনো কর্মসংস্থান নেই তাকে যাকাত দিতে হবে।
- দাস মুক্ত করার জন্যঃ যারা দাস তাদের কে মুক্ত করার জন্য যাকাত দেওয়া যাবে। তবে বরতমান দাসপ্রথা নেই বলেই চলে। তখন কোনো ব্যাক্তিযে মিথ্যা মামলায় জেল খাটছে,অসুস্থ এইসকল ব্যাক্তিদের কে যাকাত দেয়া যাবে।
- মুজাহিদ; যিনি ইসলাম প্রতিষ্টার জন্য কাজ করতেছেন তাকে সাহায্য করার জন্য যাকাত দেওয়া যাবে। এবং
- মুসাফিরঃ যিনি মুসাফির এবং বিপদগ্রস্থ থাকে বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য যাকাত দেওয়া যাবে।
আরোও পড়ুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
যাকাত কোথায় এবং কিভাবে দিতে হবে?
বিভিন্ন প্রতিষ্টান রয়েছে যারা যাকাত এর টাকা গ্রহন করে এবং সুষম্ভাবে বন্টন করে। আপনি তাদের কাছে যাকাত হস্থান্তর করতে পারেন। অথবা ৮ শ্রেণির ব্যাক্তির মধ্যে যে কাওকে যাকাত আপনি সরসরি দিতে পারেন। বাংলাদেশের মধ্যে সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্টান হলো আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। আপনি চাইলে এখানে আপনার যাকাত এর অর্থ সরাসরি দিতে পারেন।
কাপড় এবং পন্য দিয়ে কি যাকাত দেওয়া যাবে?
বর্তমানে বিভিন্ন যায়গায় যাকাত হিসেবে কাপড় দেওয়া হয় যা মোঠেও শরিয়াহ সম্মত নাহ। কারণ যাকাতের জন্য দেওয়া কাপড়্গুলো হলো অনেক নিম্নমানের এবং লোক দেখানোর মতো। তাছাড়া এইভাবে যাকাত দিলে আপনার যাকাত পরিপূর্ণভাবে আদায় হয়না। তাই কাপড় না দিয়ে সরাসরি অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করা উত্তম।
ভাইকে যাকাত দেওয়া যাবে?
আপনি আপনার ভাইকে যাকাত প্রদান করতে পারবেন। তবে অটি শর্ত এর মধ্যে যদি যেকোনো একটি মিলে জায় তাহলে পারবেন। আপনার ভাই যদি গরিব হয় বা ঋণগ্রস্থ থাকে তাহলে আপনি আপনার ভাই কে আপনার যাকাত এর টাকা দিয়ে তাকে সহায়তা করতে পারবেন।
উপসংহার
যাকাত দেওয়ার নিয়ম নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করেছি। যাকাত দেওয়া ফরজ। ইসলামের ৫টি স্তম্ব এর মধ্যে যাকাত রয়েছে। যদি আপনার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ জমা থাকে তাহলে আপনার উপর যাকাত দেওয়া ফরজ। যাকাত দিলে আমাদের সম্পদ বিশুদ্ধ হয় এবং মহান আল্লাহ আমাদের সম্পদ এর মধ্যে বরকত বাড়িয়ে দেন।