সুদ খেলে কি নামাজ হবে এবং সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

সুদ খেলে কি নামাজ হবে

সুদ খেলে কি নামাজ হবে এটা আমাদের সবার জানা জরুরি। কারন সুদ খাওয়া অনেক বড় গুনাহ। মহান আল্লাহ এবং তার রাসূল (সঃ) সুদ খেতে নিষেধ করেছেন। এটি একটি জগন্য কাজ প্রত্যেক মুমিনদের জন্য।  কারণ সুদ সমাজে ব্যাপক সমস্যা ঘটায়। যার কারণে সমাজ থেকে রহমত উঠে যায়। আজকের এই কন্টেন্ট এ আমরা সুদ কি? সুদ কেনো হারাম এবং সুদ নিয়ে বর্নিত কোরআনের আয়াত নিয়ে আলোচনা করবো। তাই পূরোটা পড়ার অনুরোধ রইলো। 

সুদ খেলে কি নামাজ হবে

সুদ খেলে কি নামাজ হবে

যদি কেও প্রশ্ন করে যে সুদ খেলে কি নামাজ হবে তাহলে তার উত্তরটা অনেকভাবে হয়ে থাকে। আমরা সকলেই জানি মহান আল্লাহ এর আদেশ মানা যেমন ইবাদত তেমনি মহান আল্লাহ এর নিষেধ মানা ও ইবাদত। এখন নামাজ পড়া মহান আল্লাহ এর আদেশ আবার সুদ খাওয়া নিষেধ। আর মহান আল্লাহ এর নিষিদ্ধ কাজ গুলো করা মানে আল্লাহ কে অসন্তুষ্ট করা এবং শয়তান কে খুশি করা। একদিকে আপনি নামাজ পড়ে ম্মহান আল্লাহ কে সন্তোষ্ট করছেন আবার অন্যদিকে সুদ লেনদেন করতেছেন।  আপনি কি ইসলামের পূরো বিষয়টি ভালোভাবে পালন করতেছেন নাকি মহান আল্লাহ এর সাথে চালাকি করতেছেন। যদি পূরো বিষয়টি ভালোভাবে বলতে চাই তা হলো আপনি ইসকামের মূল্ধারা মেনে চলতেছেন না। আর হারাম কাজ করে কোনো ইবাদত কবুল হয়না। তাই বলা যে সুদ খেলে নামাজ কবুল হবেনা এবং নামাজ হবেনা। 

আরোও পড়ুনঃ এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি

ইসলামে সুদ কি

ইসলামের নিয়মে সুদ হলো এমন একটি আর্থিক লেনদেন যেখানে গ্রাহক কে অর্থ বা টাকা প্রদান করার জন্য গ্রাহক এই অর্থ এর জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ তাকে মাসিক বা বছরভিত্তিক প্রদান করবে। সুদ ইসলামে সম্পুর্নভাবে নিষিদ্ধ সুদ দেওয়া এবং নেওয়া উভয়টি হারাম। 

সুদ কেন হারাম

সুদ হারাম হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিচে তার কয়েকটি কারণ দেওয়া হলোঃ 

  • সুদের প্রধান অংশ হলো রিবা বা সুদের আদায়। ইসলামের শরিয়াহ মোতাবেক সুদের বিনিময় কে রিবা বলা হয়। আর রিবাকে মহান আল্লাহ নিষেধ করেছেন এবং এটি জগন্য পাপকাজ।
  • সুদের কারনে অনেক ধরনের সমস্যা সমাজে সৃষ্টি হয়। যেমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্টান মাঝে মাঝে চড়া মূল্যে সুদ প্রদান করে যেটি একজনের উপড় জুলুম ছাড়া আর কিছুই না। ব্যক্তি সুদ ঠিকমতো আদায় করতে না পারলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার এমনকি বাড়ি দখল এর মতো ঘটনা ঘটে। 
  • ন্যায় এবং সামাজিক প্রতিষ্টানগুলো সুদ সমর্থিত নয়। কারণ এই প্রতিষ্টানগুলো সমাজে উন্নয়ন এর জন্য কাজ করে। কিন্তু তারা যদি সুদ গ্রহন করে বরং সেটি উন্নয়ন না করে সমস্যা সৃষ্ট করে। 
  • সুদের কারণে সমাজে অসম্যতা তৈরি হয় এবং দারিদ্রতা দেখা দেয়। 
  • সুদের ব্যবহার করা নিজের মালিকানাধীনতার বিপরীত একটি অবগতি তৈরি করে। ইসলামে মালিকানাধীনতার মূল্য এবং ন্যায়ের সম্পর্কে কঠোর নির্দেশাবলী আছে
সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত বর্নীত হয়েছে যেখানে মহান আল্লাহ সরাসরি সুদকে হারাম করেছেন। নিচে একটি আয়াত দেওয়া হলো যেখানে মহান আল্লাহ কঠোরভাবে এইগুলো নিষেধ করেছেন। 

সূরা বাকারার ২৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

“যদি তোমরা মুসলিম হও তবে সুদ বন্ধ কর এবং তোমার বাকী লাভ অস্ত্রীত রাখা এবং যদি তোমরা না কর তবে আল্লাহ এবং রাসূলের ওপর যুদ্ধ করার ঘোষণা কর। যদি তুমি তা কর তবে জানো যে, তোমার মালিকানার বিষয়ে আদালত নেই।”

বুঝতেই পারছেন এটি কেমন অপরাধ। যারা সুদ খায় মহান আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মহান সৃষ্টিকর্তা যদি এইরকম বলেন তাহলে আমাদের অবশ্যই এটি থেকে দূরে থাকতে হবে। 

আরোও পড়ুনঃ যিনা মাফের দোয়া

সুদ সম্পর্কে হাদিস

আমাদের প্রিয়নবী (সঃ) তার উম্মত দের কে সুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। সুদ নিয়ে নিচে ২ টি হাদিস দেওয়া হলোঃ 

  • সহিহ বোখারী এর ২৯৪২ নম্বর হাদিসে রয়েছেঃ মহান আল্লাহ কোনো সুদখোরকে দয়া করেননা। এমনকি আপনি আল্লাহ এর নিয়ামত এবং দয়া কোনো সুদখোর এর মাঝে দেখতে পাবেননা। 
  • সহিহ বোখারী এর ২৯৪৩ নম্বর হাদিসে রয়েছেঃ সুদ দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই হারাম। 

আমাদের সকলের উচিত এই জগন্য গুনাহ থেকে বেচে থাকা। মহান আল্লাহ এর কাছে আমরা সকলেই হালাল রিজিক এর জন্য দোয়া করবো। 

সুদখোরের শাস্তি

ইসলামে সুদকে কঠরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এর নিষেধকে অমান্য করবে এবং সুদে জরিয়ে যাবে তাহলে তার জন্য রয়েছে পরকালে কঠোর শাস্তি রয়েছে। নিচে সুদখোরের শাস্তি নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • কিয়ামতের মাঠে মহান আল্লাহ সুদখোরদের উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করবেন যে যারা যারা সুদখোর তারা তৈরি হও আমার সাথে যুদ্ধ করার জন্য। আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবো। তখন সুদখোরদের মহান আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম এর নিম্নস্থর এ নিক্ষিপ্ত করবেন। 
  • যারা সুদ খায় তাদের কে রক্তের সাগরে নিক্ষিপ্ত করা হবে। সাগরের মাঝখানে তারা হাবুডুবু খাবে এবং তীরে আসার চেস্টা করবে। যখন তীরে আসার চেস্টা করবে তখন দায়িত্তরত ফেরেস্তা তার মাথার মধ্যে সজোরে আঘাত করবে এবং সে আবার রক্তের সাগরের মাঝখানে চলে যাবে। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকবে। 

সুদের ক্ষতিকর দিক

সুদের অনেক ক্ষতি কর দিক রয়েছে। নিচে ৫টি ক্ষতিকর দিক দেওয়া হলো;

  1. সুদের কারণে সমাজে ধনীরা আরো ধনী হবে এবং গরিবরা আর গরিব হবে।
  2. সমাজের অনেক মানুষ আর্থিক দিক দিয়ে দেওলিয়া হয়ে পড়বে। 
  3. চড়া সুদের কারণে অনেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়বে।
  4. সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম আকার ধারন করবে।
  5. সমাজ থেকে মহান আল্লাহ এর বরকত উঠে যাবে।

উপসংহার

সুদ খেলে কি নামাজ হবে তার সরাসরি উত্তর হলো না। কারণ সুদ খাওয়া হারাম আর হারাম কাজ করে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হয়না। আমরা সকলেই চেস্টা করবো যেনো সুদ থেকে দূরে থাকতে পারি। কারণ সুদখোরকে আল্লাহ এবং তার রাসূল (সঃ) ভালোবাসেন না। তারা মহান আল্লাহ এর রহমত থেকে বঞ্ছিত থাকে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সুদ থেকে দূরে রাখুন। আমিন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *