হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াতগুলো জেনে নিন

হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত

হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত রয়েছে। যেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা হতাশাতে ভোগা মানুষদের কে তিনি সান্তনা দিয়েছেন। হতাশা মানে এ হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা যেটি মানুষকে মানসিকভাবে অনেক কস্ট দেয় এবং প্রতিদিনের কাজ এবং অনুপ্রেরণা কে বাধাগ্রস্ত করে। আজকের এই কন্টেন্ট এ আমরা হতাশা কি? হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত এবং এর থেকে মুক্তির দোয়া এবং হতাশা নিয়ে বর্নীত হাদিস নিয়ে আলোচনা করবো। তাই পূরো কন্টেন্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো। 

হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত

হতাশা নিয়ে কোরআনের অনেকগুলো আয়াত রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত এর মাধ্যমে তিনি ইমানদারদের কে ধৈর্য ধরার আহবান করেছেন। নিচে ৩টি হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত দেওয়া হলোঃ 

  • সূরা আলে ইমরান এর ১৪৯ নম্বর আয়াত এ বলা হয়েছেঃ “হে মুমিনগণ, কখনো হতাশ হবে না। আল্লাহর সাহায্য চাও, ও তোমাদের মধ্যে স্থিরতার সুবিধা প্রদান করেন এবং মুক্তি দিয়ে দেন।”
  • সূরা আল নাহল এর ৪১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ “তুমি নিশ্চয়ই তাদেরকে যদি একটি দুঃখময বিপর্য়য়ে আক্রান্ত করো তবে তাদের একটি উল্লাসময সময় নিয়ে আসবে। এবং তুমি কখনোই হতাশ হবে না সেই সময় প্রভুর সাহায্যের ব্যবস্থা পাওয়ার চেষ্টা করো । বলো তাঁর মহত্ত্ব কেমন?” 
  • সূরা বাকার এর ২০০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ “যারা অবিশ্বাসী, তাদের হয়তো মনে হয় যে তাদের রক্ষা একটু অবকাশহীন হয়েছে, তবুও আমি সবসময় প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং আমার সাথে থাকে যিনি সকল অবিশ্বাসী তাঁর পক্ষে এসে থাকে। আমি অবশ্যই করিম।” 

উপরোক্ত আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে আমরা যখন হতাশা গ্রস্ত হবো তখন মহান আল্লাহ এর কাছে প্রার্থনা করবো। 

আরোও পড়ুনঃ এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি

হতাশা কি?

হতাশা হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা যা যা মানুষের মন ও মনোভাবকে প্রভাবিত করে এবং তাঁকে আশাহীনতা, নিরাশা এবং নিরীহতা অনুভব করতে সাহায্য করে। মোটকথা আমরা যখন কোনো আশা বা কাজ এর মধ্যে সফল না হতে পারি বা না পাই তার জন্য আমাদের মনে যে একটি শূন্যতা, অবসাদ,চিন্তা ইত্যাদি চলে আসে তাকেই হতাশা বলে।  

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

হতাশা আমাদের শরির এবং মনকে প্রভাবিত করে যার ফলে আমরা পরবর্তি কাজগুলো করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। এই হতাশা থেকে আমাদের বের হওয়া বের হওয়া জরুরি। নিচে হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ 

  • তাওবা করাঃ আমরা অনেকেই অনেক ধরনের গুনাহ করার কারণে হতাশায় ভুগি। মাঝে মাঝে এমন কিছু গুনাহ করি যেইগুলো আমাদের মনকে প্রভাবিত করে। তখন সেই গুনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাওবা করলে আমাদের মন থেকে হতাশা দূর করতে পারি।
  • নামাজ পড়াঃ হতাশা থেকে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম হলো নিয়মিত নামাজ আদায় করা। কারণ নামাজের মাধ্যমে আমাদের মঙ্কে আমরা প্রফুল্ল করে রাখতে পারি। 
  • কোরআন তেলাওয়াতঃ কোরআন তেলাওায়াত হলো অনেক ভালো একটি পন্থা হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার। আমরা যখন কোরআন পড়ি তখন মহান আল্লাহ এর সাথে কথা হয়। আর বেশি বেশি কোরআন পাঠ করলে আমাদের কাজ এ সফলতা আসে। 
  • দৈনিক আমল বাড়ানঃ আপনার দৈনিক জীবনে ইসলামিক আমল প্রবর্তন করুন। নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি পালন করুন। এছাড়াও, গুণাগুণি সহবাস, সহিহ আচার-ব্যবহার, নেক কাজ, সত্‌সংগ ইত্যাদি পরিপূর্ণ জীবন নির্মাণ করতে চেষ্টা করুন।

আরোও পড়ুনঃ জুমার দিনের শ্রেস্ট আমল

হতাশা থেকে মুক্তির দোয়া

হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত তো জানলেন। সবথেকে বেশি যেটি আপনার জানা দরকার মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে হতাশা থেকে মুক্তির দোয়া করা। মহান আল্লাহ চাইলে তিনি আপনাকে হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারেন। তার জন্য দরকার উত্তম দোয়া করা। এই দোয়াটি হলোঃ 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউদু বিকা মিন আল-হাম্মি ওয়াল-হাজান, ওয়া আউদু বিকা মিন আল-আজ্জি ওয়াল-কাসাল, ওয়া আউদু বিকা মিন আল-জুবনি ওয়াল-বুখল, ওয়া আউদু বিকা মিন গালাবাতিদ-দায়িনি ওয়া কাহরির-রিজাল।

আপনি এই দোয়াটি যেকোনো ভাবে পড়তে পারেন। আপনি চাইলে নামাজের পর পড়তে পারেন বা যেকোনো সময় পড়তে পারেন। 

হতাশা নিয়ে হাদিস

হতাশা নিয়ে হাদিস

হতাশা নিয়ে বর্নীত অনেক হাদিস রয়েছে। মহানবী (সঃ) তার উম্মত দের হতাশ না হওয়ার জন্য বলেছেন। কারণ মুমিনরা কখনোই হতাশ হয়না। তাদের কাছে মহান আল্লাহ যথেস্ট। নিচে কয়েকটি হাদিস দেওয়া হলোঃ 

  • সহীহ বুখারীতে বর্ণিত, আবু হুরায়রা বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো মুমিন কারো উত্তেজনা ও শাস্তির ফলে নিজেকে কোনো অপ্রত্যাশিত অবস্থায় পাঠায়, আল্লাহ তার জন্য একটি পথ উদ্ধার করে তুলে আনেন।”
  • আবু হুরায়রা বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তালা বলেন, ‘আমি আমার বন্ধুর মন আমার সাথে থাকার মতো থাকি। যদি সে আমার কাছে আসুক, তবে আমি তাঁকে নিকটে নিয়ে যাই এবং যদি সে আমার দিকে হতাশা দেখায়, তবে আমি তাঁর সঙ্গে আরও প্রিয় হয়ে উঠি।'”
  •  সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, আবু সাঈদ খুদরী বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো মুমিনকে তিনটি কঠিন সময়ে প্রয়োজন হয় – যখন তিনি সংগ্রামে নিমজ্জন করে, যখন তিনি কোনো আপত্তির সময়ে বিচলিত হয় এবং যখন তিনি হতাশা হন।”

উপসংহার

হতাশা নিয়ে কোরআনের আয়াত এবং এর থেকে মুক্তির দোয়া এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। প্রকৃত মুমিনরা কখনোই হতাশ হয়না। বরং তারা ধৈর্যশীল এবং জ্ঞানি। আমরা যদি হতাশ হই তাহলে অবশ্যই ধৈর্যধারন করবো এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো। তিনিই আমাদের সব এবং পালনকর্তা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *