রিজিক বৃদ্ধির দোয়া আমাদের সকলের আয়ত্ত করে রাখা উচিত। কারণ আমাদের এই পৃথিবীতে চলার জন্য সবথেকে গুরুত্তপুর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের রিজিক। কারন আমাদের রিজিক যদি না থাকে তাহলে আমরা যতই চেস্টা করি না কেনো আমরা পাবোনা। তবে আমরা চাইলে দোয়ার মাধ্যমে আমাদের রিজিক বৃদ্ধি করাতে পারি। আজকের এই কন্টেন্ট এ আমরা রিজিক বৃদ্ধির দোয়া,রিজিক নিয়ে কোরআনের আয়াত,রিজিক নিয়ে বর্নীত হাদিস এবং আরো রিজিক সম্পর্কিত আরো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করবো। তাই দয়ে করে পড়ার অনুরোধ রইলো।
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
আমাদের রিজিক বাড়ানোর জন্য আমাদের রিজিক বৃদ্ধির দোয়া করা প্রয়োজন। রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন ধরণের দোয়া রয়েছে। আল্লাহ এবং তার রাসূল (সঃ) আমাদের কিভাবে রিজিক চাইতে হবে তা কোরআন এবং হাদিসের মধ্যে রয়েছে। রিজিক বৃদ্ধির দোয়াটি হলোঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ رِزْقًا طَيِّبًا وَعِلْمًا نَافِعًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلاً
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিজকান তাইয়্যিবান ওয়া ইলমান নাফিআন ওয়া আমালান মুতাকাব্বালান।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে পঞ্চমুখী রিজিক, উপযোগী জ্ঞান এবং গৃহীত করা কাজের প্রত্যাবর্তন প্রার্থনা করছি।
উপরের দোয়াটি আপনি বেশি বেশি পাঠ করলে মহান আল্লাহ আপনার জন্য উত্তম রিজিক এর ব্যবস্থা করে দিবেন। কারন আমাদের রিজিকদাতা মহান আল্লাহ। আমরা কিভাবে কত টাকা উপার্জন করবো এবং আমাদের শারিরীক এবং মানসিক চিন্তা ধারা মহান আল্লাহ এর কাছে। এছাড়াও রিজিক এর দোয়ার পাশাপাশি দোয়ায় প্রার্থনা করেন যাতে তাঁর জন্য উপযোগী এবং প্রভাবশালী জ্ঞান প্রদান করা হয় এবং তার কাজ আল্লাহ তাআলার দ্বারা গৃহীত এবং স্বীকৃত হয়।
আরও পড়ুনঃ উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার দোয়া
রিজিক অর্থ কি?
রিজিক হচ্চে আরব শব্দ। যার মানে দারায় প্রতিটি সম্পদ ও উপাদানের সরবরাহ বোধ করায়। এটি আহার, পানীয়, আয়, মাল, অবকাঠামো, জ্ঞান, সুযোগ, সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য এবং সমাজের মানসিক সমৃদ্ধি সহ সমস্ত সম্পদ ও উপাদানের প্রবাহ শামিল করে। রিজিক মূলত আহার, জীবিকায় আবশ্যক সামগ্রী, আর্থিক সম্পদ এবং সমাজের সম্মান ও প্রতিষ্ঠা যেমন জীবনের প্রতিটি দিকেই আছে। মানুষের জীবনে রিজিকের অভাব থাকলে তার জীবনে অভাব, বিপন্নতা এবং অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

হালাল রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
আমাদের উপার্জন এর মধ্যে যেটি সব থেকে গুরুত্তপূর্ণ সেটি হলো হালাল রিজিক। কারণ রিজিক বা সস্পদ যদি হালাল না হয় তাহলে তা আমাদের জন্য কল্যানকর নয়। এটি আমাদের কে মহান আল্লাহ এর কাছে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত হালাল রিজিক বৃদ্ধির দোয়া করা। মহান আল্লাহ তায়াল সকল মুসলিমদের হালাল রিজিক সন্ধান করার আহবান করেছেন। হালাল রিজিক বৃদ্ধির দোয়াটি হলোঃ
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رِزْقِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي عَمَلِنَا
উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রিযকিনা ওয়া বারিক লানা ফী আমালিনা।”
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাদের রিজিকে আপনি বরকত দিন এবং আমাদের কাজে বরকত দিন।
এই দোয়াটি পড়লে মহান আল্লাহ আমাদের রিজিক এর মধ্যে বরকত দেন। তাই আপনি বেশি বেশি এই দোয়া পাঠ করতে পারেন।
আরোও পড়ুনঃ মনের আশা পূরনের দোয়া
স্বামীর রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
অনেক নারি রয়েছেন যারা সব সময় চান যে তার স্বামী যেনো হালালভাবে টাকা উপার্জন করে। কিন্তু তারা জানেন না যে তার স্বামী কিভাবে আয় করে। যদি সেটি হারাম রিজিক হয় তাহলে তাদের রিজিক এর মধ্যে বরকত থাকেনা এবং বিভিন্ন ধরণের সমস্যা লেগে থাকে। তাহলে নারি তার স্বামীর জন্য হালাল রিজিক এর জন্য দোয়া করতে পারে। স্বামীর রিজিক বৃদ্ধির দোয়াটি হলোঃ
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي وَارْزُقْ بِي وَبَارِكْ لِي فِيمَا رَزَقْتَنِي
উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা রিজিকনি ওয়ারজুক বি ওয়া বারিক লি ফি মা রাযাকতানি।”
অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি আমাকে রিজিক প্রদান করুন এবং আমার মাধ্যমে রিজিক প্রদান করুন এবং যা আপনি আমাকে রিজিক প্রদান করেছেন, তায় আমার জন্য বরকত করুন।
আপনি এই দোয়াটি পড়ে প্রার্থনা করুন যে মহান আল্লাহ যেনো আপনার স্বামীকে হালাল রিজিক উপার্জন করার ব্যবস্থা করেন।

রিজিক নিয়ে কোরআনের আয়াত
রিজিক নিয়ে কোরআনের অনেক আয়াত রয়েছে। যেখানে মহান আল্লাহ কিভাবে আপনার রিজিক নির্ধারণ করেন এবং কিভাবে আপনি রিজিক চাইবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে তিনি এইগুলা নিয়ে বলেছে। নিচে রিজিক নিয়ে কোরআনের আয়াত দেওয়া হলোঃ
সূরা হুদ এর ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ
অর্থঃ “এই পৃথিবীতে কোন জীবিত পশু নেই যার রিজিক এর দায়িত্ত মহান আল্লাহ তায়ালা নেন নি। তিনি সব জীবিত পশুর প্রতিদানকে জানেন, তাদের আশ্রয়স্থল ও রিজিক সম্পর্কে জানেন। সবকিছু একটি স্পষ্ট কিতাবে রয়েছে।
এই আয়াত এর মধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে মহান আল্লাহ প্রত্যেক জীবিত প্রাণির রিযিক এর মালিক। তিনিই আমাদের পালনকর্তা।
অন্য আয়াতে বলা আছে, সূরা নাহল এর ১০০ নম্বর আয়াতে বলেনঃ
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْغَنِيُّ الْوَحِيدُ
অর্থঃ আল্লাহ রিজিক সীমিত করেন এবং যার ইচ্ছা তিনি তাকে তিনি রিজিক দান করেন।
সূরা নাহল এর ১২১ নম্বর আয়াতে বলেনঃ
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْغَنِيُّ الْوَحِيدُ
অর্থঃ আর তোমার প্রভু আল্লাহ নিজে অনন্য, সম্পূর্ণ ঐশ্বর্যবান।
রিজিক নিয়ে হাদিস
রিজিক নিয়ে অনেক হাদিস বর্নিত রয়েছে। যেখানে মহানবী (সঃ) রিজিক এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
কয়েকটি হাদিস হলোঃ
- জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমাদের আল্লাহ তাআলার নিকট কোন রিজিক নেই যা নিশ্চয়ই হতে হয়: একটি স্থানে সবচেয়ে সম্পদের রিজিক এবং অন্য একটি স্থানে সমস্ত মানুষের মৃত্যুর রিজিক।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫৮৩৯)
- আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোন মৃত্যুর সময়ে কোন মৃত ব্যক্তির রিজিক সংকট আরও বৃদ্ধি হয়। আবার সম্পদ দেওয়ার সময়ে সম্পদ বর্ধিত হয়। অতএব, এমন কিছু কাজ করো যা তোমাকে রিজিক দেয় এবং তোমাকে মৃত্যুর সময়ে অপদান দেয় না।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৪২৬)
কেনো আমরা রিজিক বৃদ্ধির দোয়া করবো?
রিজিক হচ্ছে এমন একটি নিয়ামত যা আমাদের সকলের দরকার। আমরা সকলেই চাই সুস্থভাবে বাচতে,টাকা উপার্জন করতে এবং হালাল্ভাবে কোনো কিছু করতে। কিন্তু আমরা কেই জানিনা আমাদের কিভাবে টাকা উপার্জন করতে। মহান আল্লাহ আমাদের রিজিক এর মালিক। তিনি যদি চান তাহলে তিনি আমাদের রিজিক বাড়িয়ে দিতে। তাই আমরা রিজিক বৃদ্ধির দোয়া করবো।
উপসংহার
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া আমরা কিভাবে করবো এবং রিজিক নিয়ে বর্নিত কোরআন এবং হাদিসের উক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রিজিক বলতে যে শুধু টাকা উপার্জন তা কিন্তু না। আমাদের সুস্থতা,উত্তম জীবনসঙ্গী,দৈহিক কাঠামো, শারিরিক এবং মানসিক ইত্যাদি আমাদের রিজিক। ধন্যবাদ সবাইকে।
2 Comments on “রিজিক বৃদ্ধির দোয়া কিভাবে করবেন জেনে নিন”