ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত ও নিয়ম গুলো আমাদের সকলেই জেনে রাখা ভালো। এটি অনেক ফজিলতপুর্ণ এবং অনেক ভালো আমল। সব নফল ইবাদত এর মধ্যে তাহাজ্জুদ এর সালাত পরে এটি অনেক গুরুত্তপূর্ণ। এই তাহাজ্জুদ এর পরে সব থেকে গুরুত্তপূর্ণ নফল ইবাদত হলো ইশরাকের নামাজ। আজকের এই কন্টেন্ট এ আমরা ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত ও নিয়ম, এর নিয়ত, সময় এবং আরোও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। তাই পূরো কন্টেন্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত জানাটা জরুরি। কারণ এটি এমন একটি নামাজ যেটি কোরআন এবং হাদিসে নফল নামাজ এর মধ্যে সব থেকে বেশিবার উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ এর কাছে প্রিয় হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো এই নামাজ। চলুন এর কিছু ফজিলত জেনে নেওয়া যাকঃ
- কেউ যদি ফজর এর সালাত আদায় করার পর কোনো কোনো কাজ না করে এবং সেখানে বসে থাকে সূর্যদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং সূর্য উদয় হওয়ার কিছু সময় পর ২ রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তার আমল নামায় ১ টি হজ এবং উমরা পালন করার নেকি দেওয়া হয়।
- ইশরাকের নামাজ আমাদের কে শারিরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে।
- ইশরাক এর সালাত আমাদের পরবর্তি সালাত আদায় এর জন্য অনেক ভালো সহায়ক এবং সালাতের উপর নিজেকে অনড় রাখতে সাহায্য করে।
- এটি অনেক গুরুত্তপুর্ণ হওয়ার কারণে এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ এর কাছে কিছু চাইলে তা তিনি কবুল করে নেন।
ইশরাকের নামাজ কি
ইশরাকের নামাজ হলো বিশেষ পদ্ধতির নামাজ যাকে অনেকে সালাতুল ইশরাক ও বলে থাকেন। এটি সাধারনত সূর্য উদয় হওয়ার পর আদায় করা হয় মহান আল্লাহ এর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য। এটি একটি নফল নামাজ।
ইশরাকের নামাজ কেনো পড়া হয়?
এই নামাজ পড়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। মূলত ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত এর জন্য এটি আদায় করা হয়। এটি হাদিসে অনেকবার এসেছে এবং এটি পড়ার বিধান রয়েছে।কোরআন এবং হাদিসের মধ্যে যতো নফল সালাত এর কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে ২য় ফজিলত পুর্ন অর্থাৎ তাহাজ্জুদ এর পরেই এটির অবস্থান। মহানবী (সঃ) অসিহত করে গিয়েছেন তার সাহাবীদের কে পরার জন্য। এটি নিয়ে এক্তি হাদিস রয়েছে। হাদিসটি হলোঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হইতে বর্নিতঃ
“আমাকে রাসুল(সঃ) তিনটি ওসিহিত করে গিয়েছেন তার মধ্যে একটি হলো ইশরাক এর নামাজ পড়া।
আরেকটি হাদিসে এসেছে”,
হযরত আবু যর গিফারি (রাযিঃ) হতে বর্নীতঃ
“রাসুল (সঃ) বলেছেন, কেউ যদি ফজর এর সালাত এর পর এবং সুর্যোদয় এর পর ২ রাকাত সালাত আদায় করে তাহলে তার পূরো শরির এর সাদকা দেওয়া হয়ে যায়।”
আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে কেনো এই সালাত আদায় করা হয়।
আরোও পড়ুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত
ইশরাক নামাজ কত রাকাত
ইশরাক এর নামাজ এর নির্দিস্ট করে বলা নেই যে এটি কতো রাকাত। তবে এই সালাত আদায় করার জন্য সর্বনিম্ন হলো ২ রাকাত। মানে আপনি অন্তত ২ রাকাত হলেও পড়তে হবে। এর পরে আপনি চাইলে ২ রাকাত করে ৪ রাকাত বা ৬ রাকাত বা ৮ রাকাত বা ১০ রাকাত পড়তে পারবেন। এর কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই।

ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল
অনেক মানুষ এটা নিয়ে ভাবেন যে ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল। আজকে আমরা প্রমান সহ জেনে নিবো এটি কোন ধরনের নামাজ। অনেক আলেম উলাম এটি কে নফল ও বলেছেন এবং সুন্নত ও ধরেছেন। তবে আপনি এটাকে ফজিলতপূর্ন নামাজ ধরে পড়তে পারেন এটিকে সুন্নত বা নফল মনে করে। মহানবী (সঃ) এই নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। আর তার করা কাজ গুকো আমাদের জন্য সুন্নত। আবার এই নামাজ নিয়ে এ বর্নিত হাদিস গুলোর মধ্যে উল্লেখ আছে এটি নফল নামাজ। অনেক আলেম বলেছেন এটি সুন্নত। তবে সুন্নত হওক বা নফল হওক আমরা সকলেই এই নামাজ আদায় করার চেস্টা করবো।
ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়
ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয় তা নিয়ে কোনো বর্নীত হাদিস পাওয়া যায়নি। আপনি যেই সূরা ভালো পারেন সেটি দিয়ে আদায় করতে পারেন। সূরা ফাতেহা পাঠ করার পর আপনি যেকোনো সূরা পাঠের মাধ্যমে পড়তে পারেন। তবে কোরআনের অনেক ভালো ভালো এবং ফজিলত পুর্ন সূরা রয়েছে এইগুলো দিয়ে পড়া ভালো।
ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত
ইশরাকের নামাজ পড়ার আগে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ আপনার আমল নিয়ত এর উপর নির্ভর করে। এই নামাজের নিয়ত ২ ভাবে পড়া যায়। বাংলাতে এবং আরবিতে। আমরা ২ টি নিয়ত নিয়ে আলোচনা করবো। নিচে এর নিয়ত দেওয়া হলোঃ
- আরবি নিয়তেঃ নাওয়াই তোয়া নুসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা। রাকাতাই সালাতি। সালাতুল ইশ্রাকি নাফলি রাসুলিল্লাহি তায়ালা। মুতাওাজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা বাতি শারিফাতি আল্লাহ আকবর।
- বাংলা নিয়তঃ আমি সালাতুল ইশরাক এর ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করতেছি। আল্লাহ আকবর।
আপনি যেকোনো নিয়তে পড়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত গুলো যেহেতু জেনেছেন তাই আপনি এই নামাজ আদায় করা অনেক ভালো হবে।
ইশরাকের নামাজের সময়
ইশরাকের নামাজের সময় জানাটা আপনার জন্য গুরুত্তপুর্ণ। এই নামাজ আদায় করতে হলে এটির সময় জানতে হবে। সাধারনত সূর্যোদয় হওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত ধরা হয়। এই সময়ের মধ্যে আদায় করা ভালো। ইশরাক নামাজ পড়ার সময় পরিবর্তনশীল হতে পারে এবং তা সময়মত উপলব্ধি করতে হবে।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত জানলেই শুধু হবেনা। এটি কিভাবে পড়তে হবে তা আপনার জন্য জানা জরুরি। নিচে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম দেওয়া হলোঃ
- প্রথমে অযু অবস্থায় জায়নামাজের উপর দাড়াতে হবে।
- ইশরাকের নামাজের নিয়ত করতে হবে।
- আল্লাহ আকবর বলে নিয়মমতো হাত বাধতে হবে।
- পরে সানা পাঠ করে সূরা ফাতেহা পাঠ করতে হবে।
- সূরা ফাতেহার পর যেকোনো সূরা মিলাতে হবে। রুকু ,সেজদা দেওয়ার পড় আবার উঠে দাড়াতে হবে।
- একই নিয়মে আবার আরো ১ রাকাত পড়ে রুকু সেজদার পর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
এইভাবে আপনি ইশরাকের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত ও নিয়ম নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত ও নিয়ম নিয়ে নিচে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়া হলোঃ
প্রশ্ন১ঃ ইশরাক এর নামাজ সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ কতো রাকাত?
উত্তরঃ সর্বনিম্ন ২ রাকাত এবং সর্বচ্চ আপনি যা পড়তে পারেন।
প্রশ্ন২ঃ এটি নফল নাকি সুন্নত?
উত্তরঃ এই নামাজ নফল ।তবে অনেক আলেমগণ এটিকে সুন্নত বলে থাকেন।
প্রশ্ন৩ঃ নির্ধারিত সময় ছাড়া কি এই নামাজ পড়া যাবে?
উত্তরঃ না। নির্ধারিত সময় ছাড়া এই নামাজ পড়ার কোনো নিয়ম নেই।
প্রশ্ন৪ঃ ফজরের নামাজ না পড়ে কি এই নামাজ পড়া যাবে?
উত্তরঃ এটি নফল ইবাদত। পরলে নেকি হবে আবার না পড়লে গুনাহ হবেনা। আর ফজর এর নামাজ হলো ফরজ যা পড়া বাধ্যতামূলক। তাই আপনাকে ফজরের নামাজ পড়তেই হবে।
উপসংহার
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত নিয়ে আমরা আজকের কন্টেন্ট সাজিয়েছি। আমি এবং আপনি আরা সকলেই এই ফজিলতপুর্ণ নামাজ পড়ার চেস্টা করবো। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুস্টি অর্জন করতে পারলে আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাত অনেক সহজ হয়ে যাবে। ইশরাক এর নামাজ পড়া অনেক ভালো। এটি নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। এই নামাজ সাহাবিগণ নিয়মিত সব সময় পড়তেন। মহান আল্লাহ আমাদের কে এই নামাজ পড়ার তাওফিক দান করেন। আমিন।
One Comment on “ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত ও নিয়মগুলো জেনে নিন”