সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও সূরা নিয়ে জানার আগে আপনার জানা উচিত এই নামাজ কি, এই নামাজ কেনো পড়া হয় এবং এটি পড়ার বিধান কি? আমরা সকলেই জানি মহান আল্লাহ আমাদের উপর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আমাদেরকে এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ ভালোভাবে পড়তে হবে। সালাতুল তাসবিহ হলো এমন একটি বিশেষ নামাজ যেটি আপনি যেকোনো দিন যেকোনো সময় পড়তে পারেন। আমরা আজকে এই কন্টেন্ট এ এই নামাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই ভালোভাবে পড়ার অনুরোধ রইলো।
সালাতুল তাসবিহ এর নামাজ কি?
সালাত শব্দের অর্থ হলো নামাজ আর তাসবিহ অর্থ হলো মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ কিছু নাম যা পাঠ করা হয়। অর্থাৎ, যে সালাত এর মধ্যে তাসবিহ পাঠ এর মাধ্যমে নামাজ আদায় করা হয় তাকে সালাতুল তাসবিহ এর নামাজ বলে।
আরোও পড়ুনঃ জেনে নিন জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল এর মধ্যে অন্যতম ১১টি আমল
এই নামাজ নিয়ে বর্নীত হাদিস এবং পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় তাসবিহ
এই নামাজ নিয়ে বর্নীত হাদিস গুলোর মধ্যে প্রায় সব গুলো হাদিস প্রমানিত নয় বলে অনেক বড় বড় ইসলামিক গবেষকগণ একমত পোষন করেছেন। তবে সব গুলো দুর্বল হাদিস এর মধ্যে একটি হাদিস রয়েছে যেটিকে অনেক আলেমগণ সহিহ বলেছেন। হাদিসটি হলোঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিনতে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্নীত, একবার রাসুল (সঃ) তার চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব কে বলেছিলেন, হে চাচা আমি কি আপনাকে এমন আমল এর কথা বলবো যেটি পালন করলে মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার জানা অজানা, ইচ্ছা অনিচ্ছা, প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সব ধরনের গুনাহ থেকে আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন। সেই আমল টি হলো এমন বিশেষ নামাজ যেটি ৪ রাকাত পড়বেন এবং প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা এবং তার সাথে আরেকটি সুরা মিলাবেন এবং ১০ বার তাসবিহ টি পড়বেন আবার যখন রুকুতে যাবেন তখন ১৫ বার পড়বেন পরে আবার রুকুথেকে উঠে ১০ পড়বেন, সেজদাতে গিয়ে আবার ১০ বার পড়বেন, সেজদাথেকে উঠে আবার ১০ বার আবার পরের সেজদাতে আবার ১০ বার পড়বেন আবার সেজদা থেকে উঠে আবার ১০ বার পড়বেন এইবাবে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে চার রাকাত এ ৩০০ বার পড়বেন। আপনি যদি এই প্রতিদিন একবার পড়ার চেস্টা করবেন, প্রতিদিন না পড়লে সপ্তাহে একবার পড়বেন, সপ্তাহে না পারলে মাসে একবার পড়বেন, মাসে না পারলে বছরে একবার পড়বেন, বছরে একবার না পড়লে অন্তত জিবনে একবার এই নামাজ টি পড়বেন।
( সহিহ তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
এই নামাজ পড়ার জন্য তাসবিহ সমূহ হলো ,
سبحان الله والحمد لله لا إله إلا الله الله أكبر
উচ্চারনঃ সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাহ আল্লাহ আকবর
অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ এর প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেস্ট।
এই তাসবিহ প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে মোঠ ৩০০ পড়ার বিধান রয়েছে।

সালাতুল তাসবিহ নামাজের ১৫টি নিয়ম ও সূরা
এই নামাজ এর জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম তেমনভাবে পাওয়া যায়নি। উপরে জানতে পেরেছেন এই নামাজ হলো ৪ রাকাত। এবং প্রতি রাকাতে তাসবিহটি ৭৫ বার করে মোঠ ৩০০ বার পড়ার অনুমতি রয়েছে।
নিচে 15টি সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও সূরা নিয়ে বর্ননা করা হলোঃ
- প্রথমে আপনাকে উত্তম্রুপে অযু করতে হবে।
- নামাজ পড়ার জন্য শারিরিক এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে হবে।
- সালাতুল তাসবিহ এর নামাজের নিয়ত করতে হবে
- সাধারণভাবে যেভাবে হাত বাধা হয় সেভাবে হাত বাধতে হবে এবং সানা পাঠ করতে হবে।
- সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
- সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর যেকোনো সুরা মিলাতে হবে
- তারপর তাসবিহটি ( সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহ আকবর) ১৫ বার পাঠ করতে হবে।
- ১৫ বার পড়ার পর রুকুতে যেতে হবে এবং রুকু শেষ করার পর উল্লিখিত তাসবিহটি ১০ বার পড়তে হবে।
- তারপর রুকুথেকে উঠতে হবে এবং আবার ১০ বার পড়তে হবে।
- শেষ করার পর সেজদাতে যেতে হবে এবং সেজদার তাসবিহ পাঠ করার পর উল্লিখিত তাসবিহ টি ১০ বার পড়তে হবে।
- ১ম সেজদা শেষ করার পর উঠে দুই সেজদার মাঝখানে দোয়া পড়ার পর এই তাসবিহ ১০ বার পড়বেন।
- আবার শেষ করার পর ২য় সেজদাতে যাবেন এবং আবার ১০ বার পড়বেন।
- শেষ করার পর সেজদা থেকে উঠে আরো ১০ বার পড়তে হবে এবং মোঠ ৭৫বার হলো।
- পরে দাড়িয়ে সুরা ফাতিহা পাঠ করে এবং সুরা মিলিয়ে একই নিয়মে পাঠ করতে হবে তাসবিহ গুলো।
- এভাবে করে মোঠ ৪ রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।
উল্লিখিত নিয়মে আপনি সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়তে পারেন। এই নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি এবং হাতে সময় নিয়ে পড়ার চেস্টা করবেন। এই নামাজ পড়ার জন্য তারাহুরা করতে যাবেন না । নাহলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আরোও পড়ুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত গুলো কি কি?
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও সূরা নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
প্রশ্ন১ঃ সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও সূরা নিয়ে বর্নীত হাদিসগুলো কি সহিহ্?
উত্তরঃ বেশিরভাগ হাদিস প্রমানীত নয়। তবে একটি হাদিস সহিহ রয়েছে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্ন২ঃ এই নামাজ কতো রাকাত?
উত্তরঃ ৪ রাকাত
প্রশ্ন৩ঃ এই নামাজ কখন পড়বো?
উত্তরঃ নামাজ পড়ার নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোনো সময় পড়তে পারবেন।
প্রশ্ন৪ঃ এই নামাজ পড়ার নিয়ম কি?
উত্তরঃ উপরে উল্লিখিত যে ১৫টি নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এটা অনুসরন করলেই হবে।
প্রশ্ন৫ঃ এই নামাজ পড়া বিদায়াত?
উত্তরঃ আপনি সহিহ হাদিস অনুমোদিত নিয়ম ছাড়া নামাজ আদায় করতে পারলে বিদায়াত হবে। তাই হাদিসে উল্লিখিত নিয়ম মেনে পড়বেন।
প্রশ্ন৬ঃ এই নামাজ কি বাধ্যতামূলক পড়তে হবে?
উত্তরঃ যেহেতু এটি একটি নফল ইবাদাত তাই এটি পড়া বাধ্যতামুলক নয়। তবে পড়তে পারলে ভালো না পড়লে সমস্যা নেই।
প্রশ্ন৭ঃ এই নামাজ পড়ার জন্য কোন সুরা পড়া উত্তম?
উত্তরঃ আপনি যে সুরা ভালো পড়তে পারেন সেটা দিয়ে পড়বেন। নির্দিস্ট কোনো সুরা পড়ার বিধান নেই।
উপসংহার
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও সূরা নিয়ে আমরা পুরো কন্টেন্টটি সাজিয়েছি। এই নামাজটি আপনি বছরে অন্তত একবার অথবা সারাজীবনে একবার পড়ার চেস্টা করবেন। এই নামাজ এর মাধ্যমে আমাদের প্রকাশ্য এবং গোপনীয় অনেক গুনাহ মহান আল্লাহ মাফ করে দেন। আমরা সব সময় গুনাহ থেকে বাচার চেস্টা করবো এবং মহান আল্লাহ এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো। ধন্যভাদ সবাইকে।