যিনা মাফের দোয়া জানার আগে আপনার জানা উচিত যিনার শাস্তি কি রকম হয়। দুনিয়ার সবগুলো গুনাহ থেকে যিনার গুনাহ অনেক মারাত্মক এবং এর শাস্তি ভয়াবহ। মহান আল্লাহ তায়ালা যিনাকারী এবং যিনাকারিনী উভয়কে ঘৃণা করেন। এমনকি যিনাকারিদের শাস্তি কোনো কোনো ক্ষে মৃত্যদন্ড দেওয়া , আবার পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা, বেত্রাঘাত করা, এবং আরোও অনেক কঠিন শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। এই ভয়াবহ গুনাহ এর শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ এর কাছে একনিষ্ট ভাবে তাওবা করা এবং মাফ চাওয়া জরুরি। এই কন্টেন্ট এ আমরা যিনা কী যিনা মাফের দোয়া এবং এর শাস্তি কি এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই এটি ভালোভাবে পড়ার অনুরোধ রইলো।
যিনা কি?
যিনা শব্দের আরবি শব্দ হলো লা-তাদহাব, এর বাংলা অর্থ হলো অবৈধভাবে নারি পুরুষ একসাথে মিলামেশা করা বা শারিরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া যা বিবাহ বহির্ভুত। মোঠকথা বিবাহ ছাড়া নারি-পুরুষের অশালীন কাজকর্মই হলো যিনা। অর্থাৎ যে নারি বা পুরুষ যদি অবৈধ ভাবে শারিরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় তাকে যিনা বলে।
ইসলাম ধর্মে যিনা কোন ধরনের অপরাধ?
ইসলাম ধর্মে যিনা অনেক কঠিন অপরাধ। মহান আল্লাহ এবং তার রাসুল (সঃ) কোরআন এবং হাদিসে সরাসরি মুমিন ব্যাক্তিদের যিনা থেকে দূরে থাকতে নিষেধ করেছেন। যিনা করা কবিরা গুনাহ। আমরা সকলেই জানি গুনার মধ্যে সবথেকে কঠিন অপরাধ হলো কবিরা গুনাহ। আবার কবিরা গুনাহ এর মধ্যে অন্যতম কঠিন গুনাহ হলো যিনা করা।
যিনাকারিদের শাস্তি কি?
ইসলাম ধর্মে যিনাকারিদের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রাচীন যুগে যিনাকারিদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হতো। যিনাকারিদের দুনিয়া এবং আখিরাতে শাস্তি দেওয়া হয়। দুনিয়াতে যিনার ধরন দেখে শাস্তি দেওয়া হয়। যিনার শাস্তি মৃত্যুদন্ড থেকে শুরু করে ৭০০টি বেত্রাঘাত করা পর্যন্ত। আর আখিরাতের শাস্তি হলো আরোও ভয়াবহ । জাহান্নামে যিনাকারিদের শরিরের দুর্গন্ধের কারণে অন্যরা ঠিকতে পারবেনা।

যিনা মাফের দোয়া কিভাবে করবো?
অন্যান্য গুনাহ থেকে যিনার গুনাহ অনেক ভয়াবহ। আমরা অনেকেই জেনে বা না জেনে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে এই গুনাহ করে ফেলি। যার কারনে মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তোষ্ট হন এবং আমরা বিপদে আপদে পতিত হই। তবে আমরা মহান আল্লাহর কাছে যদি যিনা মাফের জন্য দোয়া করি তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করবেন। কারন মহান আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমার ভান্ডার। তিনি তার বান্দা কে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তবে যিনা মাফের জন্য দোয়া করতে হলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হলোঃ
- খুব লজ্জিত হয়ে মহান আল্লাহ এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
- মহান আল্লাহ এর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আগে আপনাকে ভালোবাবে পবিও হতে হবে।
- এমন ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে যেনো পরবর্তিতে এই গুনাহ এর কাজ না করেন।
- মহান আল্লাহ এর সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এই কাজ না করেন।
- বেশি বেশি ইস্তিগফার করতে হবে।
- একনিষ্টভাবে তওবা করতে হবে।
এইরকম ভাবে যদি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে মহান আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করবেন ইনসাল্লাহ।
যিনা মাফের দোয়া করলে কি মহান আল্লাহ মাফ করবেন?
আপনি যদি মহান আল্লাহ এর কাছে একনিষ্ট ভাবে তওবা করেন তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ক্ষমা করবেন ইনসাল্লাহ। আমরা সকলেই জানি মহান আল্লাহ তায়ালার কয়েকি গুনবাচক নাম মধ্যে একটি হলো গাফফার। যার অর্থ অতি ক্ষমাশীল। মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। মহান আল্লায় জানেন একমাত্ত তিনি ছাড়া আর কেই আমাদের ক্ষমা করতে পারবেন না। তিনিই আমাদের মালিক,পালনকর্ত্ রিজিকদাতা, এবং শাস্তিদাতা। আমরা যদি তার কাছে ভালোবাবে তওবা করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দোয়া করি তাহলে মহান আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করে দিবেন ইনসাল্লাহ।
যিনা মাফের দোয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
প্রশ্ন১ঃ যিনা মাফের দোয়া করার জন্য কি কি করতে হবে?
উত্তরঃ আপনাকে একনিষ্ট ভাবে তওবা করতে হবে। এবং এমনভাবে তওবা করতে হবে যাতে পরবর্তিতে এই জগন্য কাজ আর না করেন।
প্রশ্ন২ঃ মহান আল্লাহ কি যিনার গুনাহ ক্ষমা করেন?
উত্তরঃ অবশ্যই মহান আল্লাহ ক্ষমা করেন। কারন তার নাম গাফফার যার অর্থ ক্ষমাশিল। বান্দা যদি তার ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে ক্ষমা তাহলে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
প্রশ্ন৩ঃ কিভাবে যিনা থেকে নিজেকে রক্ষা করবো?
উত্তরঃ যিনা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য নিজেকে ইসলাম ধর্মের মধ্যে আস্তে হবে এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
প্রশ্ন৪ঃ যার সাথে যিনা করেছি তার কাছে কি ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে?
উত্তরঃ আপ্নি যদি তার অনুমতি ব্যাতিত জোর করে যিনা করেন তাহলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তবে যদি যিনা উভয়মতে হয় তাহলে শুধু মহান আল্লাহ এর কাছে একনিষ্টভাবে তাওবা করে ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রশ্ন৫ঃ ক্ষমা পাওয়ার জন্য আমাকে কি কি করতে হবে?
উত্তরঃ আপনাকে মহান আল্লাহ এর সাথে প্রতিজ্ঞা করতে যে আপনি আগামি দিনে এই জগন্য কাজ আর করবেন না এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবেন।
উপসংহার
যিনা মাফের দোয়া আমাদের অবশ্যই করতে হবে। কারন এটি অনেক জগন্য একটি কাজ। এই ধরনের গুনাহ এর কারনে আমাদের সমাজে বিপদ নেমে আসে। বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি আসে এবং সমাজ থেকে পাপাচার বৃদ্ধি পায় আর রহমত উঠে যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত এই ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং মহান আল্লাহ এবং তার রাসুল (সঃ) এর আইন মেনে চলা।
One Comment on “জেনে নিন কিভাবে আল্লাহ এর কাছে যিনা মাফের দোয়া করতে হয়”