জেনে নিন জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল এর মধ্যে অন্যতম ১১টি আমল 

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল

জুমার দিন অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। এই দিন এর ফজিলত নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে  এমনকি কোরআন এ একটি সূরা ও রয়েছে যার নাম হলো সুরা জু’মা। জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল গুলো হলো মিসওয়াক করা, তাড়াতাড়ি গুসল করা, মসজিদে যাওয়া, খুতবা শুনা, কোরআন তিলাওয়াত করা এবং তাসবিহ পাঠ করা ইত্যাদি। 

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল বলতে কি বুঝায়?

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল বলতে বুঝায় এমন কিছু শরিয়াহ মোতাবেক কাজ অথবা আমল যা পালন করতে পারলে আমরা মহান আল্লাহ এর কাছে প্রিয় হতে পারবো এবং অনেক সাওয়াব অর্জন করতে পারবো যা আমাদের ইহকাল এবং পরকাল এর জন্য মঙ্গলজনক। আমরা সকলেই জানি জুমার দিন হলো শুক্রবার এবং ধর্মপ্রাণ মোসলমান্দের জন্য সাপ্তাহিক ইদ এর দিন। পবিও কোরআন মাজিদ এর সূরা জুমা তে এই দিন এর ফজিলত বর্ননা রয়েছে। পবিএ কোরআন এ বর্নীত আছে যে

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

অর্থঃ হে ইমানদারেরা, জুমার দিনে নামাজের জন্য যখন আযান দেওয়া হয় তখন তোমরা তাড়াতাড়ি মসজিদে দিকে রওনা হও আল্লহকে স্মরণ করার জন্য এবং দোকানপাট বন্ধ করো। এবং এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম যদি তোমরা জানতে।  

( সুরা জুমা ,আয়াত ৯)

আরোও পড়ুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত গুলো কি কি?

জুমার দিন নিয়ে বর্নীত ২টি হাদিস

এই দিন নিয়ে অনেক হাদিস বর্নীত হয়েছে। এই দিনটি অনেক গুরুত্তপুর্ন সকল মোসলমানদের জন্য। নিচে এই দিন নিয়ে বর্নীত ২টি হাদিস দেওয়া হলোঃ

  1. হাদিস ১ঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বর্নীতঃ রাসুল (সঃ) বলেন যে সুর্য উদয় হওয়ার দিঙ্গুলোর মধ্যে জুমার দিন সবথেকে উত্তম। এই দিন আল্লাহ আদম (আঃ) কে সৃস্টি করেছিলেন , এই জুমার দিনেই মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছিলেন এবন এই দিনেই থাকে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবী তে প্রেরণ করেছিলেন।  ( সহিহ মুসলিম)
  2. হাদিস ২ঃ রাসুল (সঃ) বলেন ,  কেউ যদি জুমার দিনে উত্তম্রুপে গুসল করে নতুন কাপড় পরিধান করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদের দিকে রওনা হয় এবন তারপর কোনো মুসল্লি কে কস্ট না দিয়ে ইমাম এর খুতবা শুনা থেকে নামাজ শেষ করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার পুর্ববর্তী জুমার দিন থেকে আজকের দিন এর পর্যন্ত তার সব ধরনের সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন। ( সহিহ আবু দাউদ) 

অতএব, বুঝতেই পারছেন জুমার দিন আমাদের সকলের জন্য অনেক গুরুত্তপুর্ন। নিচে ১১টি জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল   নিয়ে আলোচনা করা হয়েচে। 

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল এর মধ্যে অন্যতম ১১টি আমল। 

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল এর মধ্যে অন্যতম ১১টি আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো যেমনঃ

১ঃ উত্তম্রুপে গোসল করাঃ এই দিনে প্রত্যেক মোসলমানদের উচিত ফরজ গোসলের মতো গুসল করা এবং নিজেকে পরিপাটি রাখা। তারপর উত্তমরুপে নামাজ এর জন্য ঘর ত্যাগ করা। 

২ঃ মিসওয়াক করাঃ আমরা সকলেই জানি মিসওয়াক করা সুন্নত। সকল মোসল্মান্দের জন্য মিসওয়াক করা অনেক ভালো। মিসওয়াক করলে যেমন নেকি হয় তেমনি এই সাস্থের জন্য অনেক ভালো। জুমার দিন এ যখন আপনি নামাজ পড়ার জন্য যাবেন তখন মিসওয়াক করার চেস্টা করবেন। 

৩ঃ সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং নতুন কাপড় পরিধান করাঃ আপনার কাছে যদি ভালো মানের হালাল সুগন্ধি এবং কাপড় থাকে তাহলে এই দিন এ আপনি এইগুলা ব্যবহার করবেন। এইগুলা ব্যবহার করা অন্যদিনের থেকে এই দিনে উত্তম। রাসুল (সঃ) এবং তার সাহাবীরা জুমার দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। 

৪ঃ খুব মনযোগ সহকারে খুতবা শুনাঃ জুমার নামাজের মধ্যে অন্যতম একটি অপরিহার্য দিক হলো খুতবা। খুতবার সময় কোনো কথা বললে কবিরা গুনাহ হয়। খুতবা আল্লাহ এর ফেরেস্তাগণ খুব মনযোগ সহকারে শুনেন। যখন ইমাম খুতবা পড়া শুরু করেন তখন খুব মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনবেন। 

৫ঃ দোকানপাট বন্ধ করাঃ এই দিনে আপনার যাবতীয় ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ রাখবেন। কেননা এই দিন এর আমল গুলো অনেক গুরুত্তপুর্ণ। কোর আন মাজিদ্র সুরা জুমাতে এই দিনে বেচা-কেনা বন্ধ করার জন্য বলা হয়েচে। এই দিনে দোকানপাট বন্ধ করে মসজিদের দিকে রওনা হওয়া অনেক উত্তম। 

৬ঃ বেশি বেশি দরুদ পাট করাঃ এই দিনে বেশি বেশি দরুদ পাট করা অনেক ভালো। দরুদ মানে হলো আল্লাহ এবং তার রাসুল এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আমরা যতো বেশি দরুদ পাঠ করবো আমাদের জন্য ততই ভালো। মহান আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসুল এর সান্নিধ্য লাভ করার জন্য আমরা বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবো। হাদিসে বর্নীত আছে যে, জুমার দিনে আদম (আঃ) কে সৃস্টি  করা হয়েছিলো , এই দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো এবং এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আবার এই দিনে কিয়ামত হবে এবং সব মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। তাই আমাদের বেশি বেশি করে এই দিনে দরুদ পাঠ করবো। বিশেষ করে দরুদে ইব্রাহিম 

( আল্লাহুম্মা সাল্লিয়াল মোহাম্মাদিও ওয়ালাআলী মোহাম্মদ ,কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়ায়ালা আলী ইব্রাহিম, ইন্না কাহামী দুম্মাজিদ, আল্লাহুম্মা বারিকয়ালা মোহামাদ্দিও ওয়ালা আলি ইব্রাহিম কামা বারিক্তা আলা ইব্রাহিমা ওয়ায়ালা ইব্রাহিম ইন্না কাহামি দুম্মাজিদ।)

বেশি বেশি পাট করা। এই দরুদ অন্য সব দরুদ থেকে অনেক উত্তম। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কিছু চাওয়ার জন্য আপনি এই দরুদ বেশি বেশি পাঠ করবেন। 

৭ঃ তারাতারি জুমার নামাজের এর জন্য মসজিদে যাওয়াঃ  এই দিনে উত্তম রুপে গুসল করার পর পবিত্ত কাপড় পরিধান করে তারাতারি মসজিদে যাওয়ার জন্য ঘরত্যাগ করুন। হাদিসে আছে, কয়েকজন ফেরেস্তা মসজিদের দরজায় লিস্ট করতে থাকেন এবং তারা খেয়াল রাখেন যে কারা আগে মসজিদে প্রবেশ করে। তারা প্রবেশকারিদের লিস্ট করে এবং পর্যায়ক্রমে ১ম প্রবেশকারির নামে একটি উট জবাই করার সাওয়াব এর পরের জন এর জন্য একটি গরু এর পরের জন্য একটি দুম্বা এইভাবে তারা মানুষদের আমলনামায় সাওয়াব লিখেন। 

৮ঃ বেশি বেশি দোয়া করাঃ অন্য দিন থেকে জুমার নামাজে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই দিনের ফজিলত অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। আর হাদিসের মধ্যে একটি সময় এর কথা উল্লেখ আছে যেই সময়ে দোয়া করলে বা মহান আল্লাহর কাছে যা চাওয়া তাই তিনি তার বান্দাকে প্রদান করেন। তবে এই সময় টা কখন তা হাদিসে উল্লেখ নেই। তবে হাদিসে একটি সময় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সময়টি হলো আসর থেকে মাগ্রিব। এই সময় এর মধ্যে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন। তাই আমরা সবাই এই দিনে বেশি বেশি করে দোয়া করবো। 

৯ঃ সূরা কাহফ পাঠ করাঃ সূরা কাহফ পবিত্ত কোরান শরিফ এর একটি অনেক গুরুত্তপুর্ণ সূরা। জুমার দিনে এই সূরা পাঠ করার ফজিলত অনেক রয়েছে। এর একটি ফজিলত হলোঃ

“কেউ যদি জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করে তাহলে তার চেহেরা নুর এর মতো থাকবে পরবর্তী ২ জুমা পর্যন্ত”

আরোও অনেক ফজিলত আছে এর দিনের জন্য। কেও যদি পুরো সুরা না পরতে পারে তাহলে সে শেষ ১০ আয়াত বা প্রথম ১০ আয়াত পড়তে পারবে। এর ফজিলত হলো এই মুহুর্তে যদি দাজ্জাল চলে আসে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে দাজ্জাল এর ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন। 

১০ঃ বেশি বেশি তাসবিহ পাঠ করাঃ এই দিন এ আপনি ,মহান আল্লাহ এর বিভিন্ন ধরনের নাম ধরে তাসবিহ পাঠ করতে পারেন। এই দিনে বেশি বেশি তাসবিহ পাঠ করলে মহান আল্লাহ এর কাছে যেকোনো দোয়া কবুল এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনি চাইলে এই তাসবিহ গুলো পাঠ করতে পারেন ( সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ আকবর) ।

১১ঃ বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়াঃ মহান আল্লাহ এর কাছে ক্ষমা চাওয়ার অন্যতম উপায় হলো বেশি বেশি ইস্তিগফার করা। জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম দিন। আপনি চাইলে আস্তাগফিরুল্লাহ বেশি বেশি পড়তে পারেন। 

আপনারা চাইলে উপরের আমল গুলো করতে পারেন। জুমার দিনে আপনি যেকোনো আমল করতে পারেন পারেন। অনেক আমল এর মধ্যে উপরের ১১টি গুলো হলো জুমার দিনের শ্রেষ্ট আমল। 

আরোও পড়ুনঃ শুক্রবারের দোয়া কবুলের আমল এর মধ্যে ৫টি অন্যতম আমল

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল নিয়ে আরো কিছু কথা

আমরা সকলেই জানি শুক্রবার হলো জুমার দিন। এই দিন ইসলাম ধর্মের কাছে অনেক গুরুত্তপুর্ন। মহান আল্লাহ এই দিনে মানুষ সৃস্টি করেছেন এবং এই দিনের দুনিয়া ধংশ হবে। এই দিনের জন্য অনেক আমল রয়েছে। তবে এই দিনের আমল এর মধ্যে অনেক ভালো আমল রয়েছে যেগুলো করলে মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন। আমরা ইতিমধ্যে জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল নিয়ে আলোচনা করেছি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এই আমল গুলো সটিক ভাবে পালন করার জন্য বরকত দেন। আমিন। 

উপহংসার 

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল গুলো যদি আমরা সটিকভাবে পালন করতে পারি তা আমাদের জন্য মঙ্গল। এতে আমরা দুনিয়াতে এবং আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারবো। আর আমাদের যা কিছু চাওয়ার মহান আল্লাহ এর কাছে চাইবো। আমরা জুমার দিনে এই আমল গুলো করে যদি মহান আল্লাহ এর কাছে দোয়ার মাধ্যমে কোনো কিছু চাই তাহলে আমাদের কাংকিত জিনিস টা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

2 Comments on “জেনে নিন জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল এর মধ্যে অন্যতম ১১টি আমল ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *