সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত গুলো কি কি?

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত জানার আগে আমাদের জানতে হবে যে সালাতুল হাজত নামাজ কি এবং কেনো এই বিশেষ সালাত আদায় করা হয়। আমরা মানুষ হিসেবে আমাদের বিভিন্ন ধরণের চাওয়া এবং পাওয়া থাকতে পারে। কারণ আমাদের চাওয়ার এবং চাহিদার শেষ নেই। তাই আমাদের চাওয়া গুলো পূরণ করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য যে বিশেষ সালাত আদায় করি থাকেই সালাতুল হাজত এর নামাজ বলা হয়। নিচে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজ কি?

সালাতুল অর্থ হলো নামাজ আর হাজত অর্থ হলো প্রয়োজন বা ইচ্ছা।  সালাতুল হাজত হলো এমন এক ধরনের বিশেষ নামাজ যেটি বান্দা তৎক্ষণাৎ তার মনের আশা পূরন করার জন্য নামাজ আদায় করে। অর্থাৎ বান্দা তার বিশেষ ইচ্ছা পূরন করার জন্য যে সালাত আদায় করে তাকে সালাতুল হাজত এর নামাজ বলে। 

সালাতুল হাজত নামাজ কেনো পড়া হয়?

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত জানার আগে আপনাকে জানা দরকার এই নামাজ কেনো পড়া হয়। আমরা মানুষ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বিপদ এর সম্মুখিন হই। কারণ বিপদ আমাদ্বের সঙ্গের সাথী। বিপদ গুলো আমাদের উপর ভিবিন্ন ভাবে পতিত হয়। সেটা হতে পারে রাজনীতিক বিপদ, অর্থনইতিক বিপদ, সামাজিক বিপদ, মিথ্যা অপবাদ ইত্যাদি যেকোনো বিপদ এর মুখোমূখি হতে পারি। এই বিপদ আপদ থেকে আমরা রক্ষা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদ এ বলেনঃ 

أيها المؤمنون! اطلب المساعدة من خلال الصبر والصلاة ؛ إن الله مع الصابرين

উচ্চারনঃ আয়ুহা আলমুমিনুন! আতলুব আলমুসাইদাত মিন খিলাল আলসাবর ওয়ালসালাত; ‘আইনা আল্লাহ মায়ে আলসাবিরিন

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য এবং প্রার্থনার মাধ্যমে সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করুন; যারা প্রকৃত ধৈর্যশীল তাদের সাথে আল্লাহ সবসময় থাকেন। 

উপরোক্ত আয়াত এর মাধ্যমে বুঝা যাচ্চে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার মাধ্যম হচ্চে তার সালাত আদায় করা। যেহেতু আমরা আমাদের মনের আশা পূরন এবং বিপদ এ সাহায্য চাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবো , তার কাছে যেকোনো সময় প্রার্থনা করার জন্য যে বিশেষ নামাজ আদায় করবো তাই হলো সালাতুল হাজত। 

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে,

 “নবী করিম (সঃ) যখন কোনো বিপদ এর সম্মুখিন হতেন তখন তিনি সাথে সাথে ২ রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন”

(আবু দাউদঃ ১৩১০ এবং তিরমিযী শরিফঃ ৪৮২)

সুতরাং,

উপরের কোরআন এবং হাদিস এর আলোকে বুঝা জায় যে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার জন্য সালাতুল হাজত এর নামাজ পড়া হয়। 

আরোও পড়ুনঃ শুক্রবারের দোয়া কবুলের আমল এর মধ্যে ৫টি অন্যতম আমল

সালাতুল হাজত নামাজ নিয়ে বর্নীত হাদিস গুলো কি?

সালাতুল হাজত নাম এ কোনো কথা হাদিস এ বর্নীত হয়নি তবে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বিপদে সাহায্য পাওয়ার জন্য নামাজ আদায় করা যায় এটা হাদিসে এসেছে। আর এটাকে সালাতুল হাজত এর নামাজ বলা হয়। সুত্রাং পক্ষান্তরে বলা যায় যে সালাতুল হাজত এর নামাজ হাদিস এর মাধ্যমে প্রমানীত। এই নিয়ে তিরমিযী শরিফ এর ৪৮২ এবং আবু দাউদ এর ১৩১০ নম্বর হাদিস এ পাওয়া যায়। 

সালাতুল হাজত এর নামাজ কতো রাকাত?

সালাতুল হাজত এর নামাজ কতো রাকাত তা নির্দিস্ট করে কোনো যায়গায় বলা হয়নি। এটি একটি নফল ইবাদত। এটি পরলে ভালো এবং না পড়লে কোনো সমস্যা হবেনা। আপনি যতো রাকাত ইচ্ছা ততো রাকাত পড়তে পারবেন। তবে হাদিস এ আসেছে রাসূল (সঃ) বিপদের সময় ২ রাকাত সালাত আদায় করতেন।  তবে আপনি তার থেকে বেশি রাকাত আদায় করতে পারবেন বা ২ রাকাত ও আদায় করতে পারবেন। মনে রাখবেন সালাতুল হাজত এটি একটি নফল ইবাদত। 

সালাতুল হাজত এর নামাজ পড়বো কোন সময়?

এই নামাজ পড়ার কোনো নির্দিস্ট সময় নেই বা কোন সময় পড়তে হবে তা হাদিসে উল্লেখ করা নেই। আপনি যেকোনো সময় তা আদায় করতে পারবেন। তবে সালাত আদায় করার কিছু নিষিদ্ধ সময়  রয়েছে। এই সময় গুলাতে সালাতুল হাজত পড়া যাবেনা এবং বাকি সময় পড়া যাবে। এটি নফল ইবাদত হওয়ায় আপনি যখন ওয়ি বিপদে পড়বেন বা আপনার কোনো কিছু চাওয়া দরকার তখন আপনি এই নামাজ আদায় করার পর মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় করতে পারবেন। 

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

এই  নামাজের নিয়ম এবং ফজিলত যদি জানতে চান তাহলে পুরো বিষয় ভালো করে বুঝার চেস্টা করেন। প্রথমতো জেনে রাখা দরকার যে সালাতুল হাজত নামাজ এর নির্দিস্ট কোনো নিয়ম কোরআন বা হাদিসে উল্লেখ নেই। আপনি সাধারন ভাবে যেভাবে নামাজ পড়েন সেভাবেই এই নামাজ আদায় করতে পারেন। এখন ২ টা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো ১। নিয়ম এবং ২।ফজিলত। 

১। নিয়ম

যদিও এটার নির্দিস্ট কোনো নিয়ম নেই তবে কিছু নিয়ম যা অনেক আলেম উলামা অনুসরণ করার জন্য বলেন তা নিম্ন্রুপঃ

  • প্রথমতো পবিত্ত হতে হবে।
  • উত্তমরুপে অযু করতে হবে।
  • সালাত আদায় করার জন্য নিয়ত করতে হবে। 
  • সাধারণভাবে আমরা যেভাবে প্রথমে সানা পাঠ করি তা করতে হবে।
  • সূরা ফাতেহা পড়তে হবে এবং তারপর অন্য কোনো সূরা পড়তে হবে। 
  • এভাবে করে ২ রাকাত সালাত আদায় করতে হবে ( আপনি চাইলে ২ রাকাত করে ৪ রাকাত বা তার বেশি পড়তে পারেন)

২। ফজিলত

মুলতো সালাতুল হাজত নামাজ পড়া হয় বিশেষ কোনো প্রয়োজন পূরণ করার জন্য। যেহেতু হাদিসে তার প্রমান রয়েছে তাহলে অবশ্যই তার ফজিলত রয়েছে। নিচে তার কয়েকটি ফজিলত বর্না করা হলো যেমনঃ 

  • এই নামাজ এর মাধ্যমে মনের আশা পূরন করা যায়। 
  • বিশেষ কোনো প্রয়োজন হলে বা কোনো কিছুর দরকার হলে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য এই নামাজ আদায় এর মাধ্যমে সাহায্য পাওয়া সম্ভব। 
  • কোনো বিপদ আপদ এ পরলে এই নামাজ এর মাধ্যমে 
  • বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ইত্যাদি। 

নিয়ত 

এই নামাজ এর জন্য তেমন কোনো প্রসিদ্ধ নিয়ত নেই। আপনি চাইলে বাংলাতে পড়তে পারেন অথবা এইভাবে পড়তে পারেন যেমনঃ

“নাওাইতুওয়া নুসাল্লিয়া লিল্লাহী তায়ালা রাকাতাই সালাতুল সালাতুল হাজত নাফলী রাসুল্লাহী তায়ালা। মুতাওাজ্জাহান ইলা জিহাতীল কা বাতি শরীফাতী আল্লাহ আকবর।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া

যেহেতু আপনি একটা বিশেষ কারণে নামাজটি আদায় করতেছেন তাই আপনি সেই বিশেষ চাওয়াটা মহান আল্লাহ এর কাছে চাইতে পারেন। তবে দোয়া করার আগে আপনি মহান আল্লাহ এর তাসবিহ পাঠ করবেন এবং রাসূল (সঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করবেন। কারণ দরুদ এবং তাসবিহ পাঠ এর মাধ্যমে আমরা দোয়া কবুল করানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে নিতে পারি। আপনারা চাইলে এই দোয়া টি পড়তে পারেন।

رابا أتينا فيدونيا حاسباتو وكيل أخيراتي حسنو وخينة عزبانا.

উচ্চারনঃ রাব্বা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসবাতাও ওয়াখীল আখিরাতি হাসানাও ওয়াখিনা আযাবান্নার। 

অর্থঃ হে আল্লাহ, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে দুনিয়াতে এবং আখিরাতে শান্তি দিন এবং আপনার জাহান্নাম এর আগুন থেকে রক্ষা করুন। 

আরও পড়ুনঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল তাসবিহ এর পাচটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে আরো কিছু কথা

আমরা সবাই মানুষ এবং দিনশেষে এটাই আমাদের মূখ্য পরিচয়। আমরা আমাদের বিভিন্ন ভূলের কারণে বিভিন্ন সময় বিপদ আপদ এ পতিত হই। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদত এবং ইস্লামি মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার জন্য। তিনি আমাদেরকে বিভিন্নভাবে পরিক্ষা নেন সেটা হতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই, বিপদ আপদ বা অন্যান্য অনেক কিছু। তিনি যখন আমাদের কে বিপদে পতিত করেন তিত্নি সেই বিপদ উদ্ধার করার জন্য পথ অ তইরি করে দেন। তিনি  আমাদের জন্য ভালো যা মনে করেন তাই আমাদের জন্য করেন। তবে মাঝে মাঝে আমাদের অনেক জিনিস এর প্রয়োজন হয় যা আমরা আমাদের দক্ষতা দিয়েও পাওয়া ও সম্ভব নয়। তখন আমাদের মহান আল্লাহ এর সাহায্য ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। আমরা কিভাবে তার কাছে চাইব তিনি তাও আমাদের শিখিয়েছেন কোরান এবং তার রাসুল (সঃ) এর মাধ্যমে। আমরা আমাদের বিভিন্ন ধরনের হাজত পূরন করার জন্য যে নফল ইবাদত করি এটাই হলো সালাতুল হাজত এর নামাজ। আমরা উপরে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করেছি আপনাকে পড়ার অনুরোধ রইলো। 

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তরঃ 

আমরা সকলেই জানি যে এই নামাজ পড়া হয় যেকোনো ধরনের নেক আশা পূরন করার জন্য। নিচে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে কিছু সাধারন প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়া হলোঃ 

প্রশ্ন ১ঃ সালাতুল হাজত নামাজ কি ধরনের ইবাদত?

উত্তরঃ এটি একটি নফল ইবাদত।

প্রশ্ন২ঃ এই নামাজ কতো রাকাত?

উত্তরঃ এটি কতো রাকাত তা উল্লেখ নেই তবে আপনি ২ রাকার থেকে শুরু করে যতো ইচ্ছা ততো রাকাত পড়তে পারবেন।

প্রশ্ন ৩ঃ এই নামাজ পড়তে হয়ঃ

উত্তরঃ সালাত আদায় করার নিষিদ্ধ সময় ছাড়া আপনি যেকোনো সময় আদায় করতে পারবেন।

প্রশ্ন ৪ঃ এই নামাজ পড়ার জন্য কি করতে হবে?

উত্তরঃ এই নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে পবিত্ত হতে হবে এবং উত্তমরুপে অজু করতে হবে। 

প্রশ্ন ৫ঃ এই নামাজ পড়ার মাধ্যমে আমার কি কি উপকার হবে?

উত্তরঃ এই নামাজ যেহেতু নিজের হাজত বা ইচ্ছা পূরন করার নামাজ তাই আপনার মনের আশা পুরন হওার সম্ভাবনা বেশি থাকে এই নামাজ এর মাধ্যমে। 

আরও পড়ুনঃ ১১০ টি কবিরা গুনাহের তালিকা কি কি এবং এর থেকে বাচার উপায় কি?

উপসংহার

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত নিয়ে আমরা পুরো কন্টেন্টটি সাজিয়েছি। এখানে আপনি কিভাবে নামাজ আদায় করবেন এবং কিভাবে নিয়ত করবেন আর কিভাবে দোয়া করবেন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এটি অনেক গুরুত্তপূর্ণ একটি ইবাদত এবং এই সালাত আদায় এর মাধ্যমে আপনি আপনার মনের আশা পূরন করতে পারবেন। মনে রাখবেন মহান আল্লাহ আপনাকে যা ইচ্ছা তাই দিতে পারবেন তবে আপনাকে এবং আমাকে তার কাছে সঠিক নিয়মে চাইতে হবে এবং সকল ধরনের গুনাহ থেকে বেচে থাকতে হবে।