হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল এই তাসবিহ টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ আমাদের ইসলাম ধর্মে। আমরা মানবজাতি হিসেবে পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে নানা বিপদ আপদ এর সম্মূখীন হই। আমাদের চলাফেরা এবং কাজকর্ম এর মধ্যে বিপদ আসাটা সাভাবিক। এবং এইরকম অনাকাঙ্খিত বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। এবং আমরা কিভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাইব তা কোরআন এবং হাদিসে বর্ণ্না করা হয়েছে। আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দোয়ার মধ্যে এই দোয়াটি অনেক বেশি কার্যকর। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই দোয়া সম্পর্কে কোরআন এবং হাদিসে কিভাবে বর্ণীত হয়েছে।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল এর বাংলা অর্থ কী?
এই দোয়াটি আরবি শব্দ. যার অর্থ অনেক সুন্দর এবং সাবলীল। এই দোয়াটি পবিএ কোরআন মাজিদ এর সূরা আনফাল এর ৪০ নম্বর আয়াত এবং সুরা আল ইম্রান এর ১৭৩ নম্বর আয়াত এবং সূরা হজ এর ৭৮ নম্বর এর আয়াত এর সাথে মিল পাওয়া যায়। যার সম্মিলিত উচ্চারন দাড়ায় এইরকম তা নিম্নরুপঃ

حاسبون الله ونعمال وكيل ، نعمال مولى ونعمان – ناصر.
উচ্চারনঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল ওয়া নিমাল মাওলা ওয়া নিমাল নাসির।
বাংলা অর্থঃ আমার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা যথেস্ট এবং তিনিই আমার জন্য উওম পরিকল্পনাকারী এবং সাহায্যকারী।
এই দোয়াটি কেনো এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন কোন নবী পাট করেছেন।
বর্ণীত আছে যে এই দোয়া দুইজন নবী পাট করেছেন তারা হলেনঃ
১। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও
২। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)
জানা যায় যে যখন ইব্রাহিম নবীকে আগুন এ ফেলে মেরে ফেলার জন্য সেসময়ের অত্যাচারী বাদশা চেস্টা করেছিলো। তখন মহান আলাহর পক্ষ থেকে জিব্রাঈল (আঃ) এসেছিলেন আগুন কে নিভানোর জন্য। তখন নবী বলেছিলেন যে “ আমার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা যথেস্ট” তারপর মিকাঈল (আঃ) এসেছিলেন আল্লাহর হুকুমে বৃস্টি দিয়ে আগুন নিভানোর জন্য কিন্ত তিনি তার কথার উপর অটুট ছিলেন এবং একই কথা বলেছিলেন। তারপর যখন তাকে আগুনে ফেলা হয়েছিলো তখন মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমে আগুন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল এবং তার কোনো ক্ষতি হয়নি।
ঠিক তদ্রুপ ভাবে,
ওহুদ এর যুদ্ধ যখন কাফিররা চারিদিক থেকে ঘেরাও করেছিলো এবং যখন সাহাবীরা প্রায় পরাজয় এর দ্বারপ্রান্তে তখন রাসূল (সঃ) “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল” এই দোয়াটি পাট করেছিলেন।
এই দুই ঘটনার মাধ্যমে বুঝা যায় যে এই তাসবিহ পাট করার অনেক ভালো প্রত্যেক মুমিন দের জন্য।
আরোও পড়ুনঃ আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার এর অর্থ
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল তাসবিহ এর ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত
নিঃসন্দেহে এই তাসবিহ টির অনেক ফজিলত। এই দোয়ার ৫টি ফজিলত হলোঃ
১। কেও যদি বিপদ আপদ এর সময় এই দোয়া টি পাঠ করে আলাহ তায়ালা তাকে ওই বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
২। কেউ যদি এই তাসবিহ টি ১০০০ বার পড়ে মহান আল্লাহ এর কাছে প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার প্রার্থনা ক্বুল করেন;
৩ঃ কেউ যদি এই তাসবিহ প্রত্যেক ফরজ নামাজ এর পর পাঠ করে তাহলে আল্লাহ থাকে বিভিন্ন বিপদ আপদ থেকে রহম করেন।
৪। কেউ যদি কোনো কটিন বিপদে পড়ে যায় আর সাথে সাথে এই তাসবিহ করুণভাবে পড়ে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে ওই বিপদ থেকে রহম করার জন্য রাস্তা খুলে দেন এবং
৫। যে এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করবে তার ঈমান এবং তাওয়াক্কুল বাড়ে।
আমরা সবাই জানি যে আমাদেরকে একদিন মরতে হবে। আমরা যতদিন বেছে থাকব ততদিন আমাদের উপর পরিক্ষামূলক ভাবে বিভিন্ন ধরনের বিপদ আপদ আমাদের উপর আসবে। সেটা হতে পারে আর্থিকভাবে , সামাজিকভাবে, বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা অপবাদ এর মাধ্যমে। কারণ আমরা কেউ ওই বিপদ থেকে দূরে নয়। বিপদ আমাদের উপর আসবেই। এইজন্য আমাদের সবার উচিত মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ এবং নিষেধ মেনে চলা । সব ধরনের বিপদ আপদ থেকে একমাএ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ রক্ষা করতে পারবেনা। তাই একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকল ধরণের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের বেশি বেশি এই তাসবিহ পাঠ করা জরুরি।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল পড়ার নিয়ম
এটি পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। আপনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই পড়তে পারেন। আপনি কোনো বিপদে পড়লে এই দোয়া পড়তে পারেন অথবা এমনিতেই পড়তে পারেন। তবে কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে যেভাবে পড়লে এটি অনেক ফল্প্রসু। নিচে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল পড়ার নিয়ম দেওয়া হলোঃ
- এই দোয়া ১০০০ বার পড়ে মহান আল্লাহ এর কাছে কোনো চাইলে তিনি তা কবুল করেন। তাই আপনি কোনো কিছু চাওয়ার আগে এই দোয়া ১০০০ বার পড়ার চেস্টা করবেন।
- ফজর এর নামাজ এর পড়ে এই দোয়া অন্তত সাতবার পড়তে পারেন।
- জুমার দিনে এই দোয়া পড়তে পারেন।
- এশার নামাজের পরে এই দোয়া সাতবার পড়তে পারেন।
- তাহাজ্জুদ নামাজের পড় এটা পড়ে মহান আল্লাহ এর কাছে দোয়া করলে সেটি কবুল চান্স বেড়ে যায়।
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন১ঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল কোন সূরার আয়াত?
উত্তরঃ সূরা আলে ইমরান এর ১৭৩ নম্বর আয়াত।
প্রশ্ন২ঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল এর অর্থ কি?
উত্তরঃ এর অর্থ হলো “ আমার জন্য আল্লাহ যথেস্ট”
প্রশ্ন৩ঃ এটি কতবার পাঠ করবো?
উত্তরঃ এটি আপনি যত খুশি ততোবার পাঠ করতে পারবেন।
প্রশ্ন৪ঃ এটি পড়তে হলে কি পবিত্ত থাকা লাগবে?
উত্তরঃ এটি পড়ার জন্য আপনাকে পবিত্ত থাকা লাগবেনা। তবে পবিত্ত অবস্থায় এটি পড়া অনেক ভালো।
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল নিয়ে কিছু কথাঃ
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল পাঠ এর অনেক উপকারীতা আছে। এই তাসবিহ পড়ার জন্য নবিজী (সঃ) তার সাহাবীদের কে উৎসাহী করেছেন। নিজের মনের আশা পূরণ করার জন্য এই তাসবিহ পাট করা জরুরী। নিজেকে বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখার জন্য এবং বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য বেশি বেশি পাঠ করুন। মনে রাখা উচিত যে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দা কে পরিক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ভাবে বিপদে ফেলেন যাতে করে আমরা তার আনুগত্য লাভ করতে পারি আর তার তাসবিহ বেশি বেশি পাঠ করি। কোনো বিপদ ওই চিরস্থায়ী নয়। আমরা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার মুখাপেক্ষি। আমরা সবাই তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। তাই বিপদে আমরা সবাই হতাশ না হয়ে মহান আলাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা উচিত এবং বিশেষ করে এই তাসবিহ পাঠ করা উচিত।
উপসংহারঃ
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল এর তাসবিহ এর যে কতটুকু কার্যকর তা আপনারা উপরের লেখা টা পড়ে বুঝতে পেরেছেন। নিজেকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে সব সময় এই তাসবিহ পাঠ করুন। আর সব সময় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করুন। কারন আপনার রিজিক এর ফায়সালা আপনার রব ব্যবস্থা করবেন। যেকোনো বিপদ আপদ এ এই দোয়াটি পাঠ করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন। ব্লগটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
tnx for sharing
Also thanks for Reading our Blog posts. Best of luck